দেবীপক্ষের সূচনায় জিএসটি ২.০ লাগু হওয়ার পূর্বে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে এই কর হ্রাসে এনডিএ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাল্টা অতীত ঘেঁটে তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে জিএসটি হ্রাসে ‘ক্রেডিট’ কার, স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। রবিবার মহালয়াতে পুজো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে বাঙালি অস্মিতা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মমতা। যোধপুর পার্কের দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘একজন জিএসটি নিয়ে বড় কথা বলছেন! জীবন বিমায় জিএসটি ছাড় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে কর হ্রাসের প্রস্তাব প্রথম আমি দিয়েছিলাম চিঠি লিখে। এর ক্রেডিট রাজ্যের। কর ছাড়ের ফলে রাজ্যের রিভিনিউ ক্ষতি ৯০০ কোটি টাকা এবং সবমিলিয়ে তা প্রায় ২০ হাজার কোটির কাছাকাছি! রাজ্যের জিএসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই ক্রেডিট রাজ্যের। স্বাস্থ্যসাথীর জন্য টাকা দিতে হয় না তাহলে জীবন বিমায় কেন টাকা দিতে হবে? ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা আমাদের বকেয়া, আরও ২০ হাজার কোটিও গেল। কাটল টাকা আমাদের, প্রচার হচ্ছে ওঁদের!’ তবে মমতার মতে, ‘টাকা কেটেছে রাজ্যের জিএসটি থেকে, তাতে দুঃখ নেই। আমজনতার কাজ হওয়াতে আমি খুশি। বিজেপি রাজ্যগুলিকে ঘুরিয়ে টাকা দেবে কেন্দ্র, কিন্তু বাংলার আবাস থেকে একশো দিনের টাকা বন্ধ! অনুসন্ধানে ১৫৬টা কমিটি এসেছে বাংলায়। এখানে টিকটিকি দৌঁড়ালেও জাতীয় মহিলা কমিশন আসে কিন্তু উত্তরপ্রদেশ-বিহারের অপরাধ দেখতে পায় না।’
মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট অবস্থান, রাজ্যের জিএসটি থেকে টাকা কাটা হয়েছে বদলে ক্ষতিপূরণ মেলেনি। সুতরাং, জিএসটিতে অবদান রাজ্যেরই। এদিন চেতলা অগ্রণীর দুর্গা প্রতিমার চক্ষুদান করে পুজো উদ্বোধন করেন মমতা। এরপর তাঁর বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে ফুটে ওঠে বাঙালির অবদানের প্রসঙ্গ। বিজেপিকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাভাষীদের কেন অত্যাচার করবে তোমাদের নেতারা? সব ভাষাকে যদি আমি সম্মান করতে পারি তাহলে আমার মাতৃভাষাকে অসম্মান করার অধিকার কারোর নেই। স্বাধীনতা, নবজাগরণের জন্ম দিয়েছে বাংলা। গান্ধীজি গুজরাটে জন্মালেও পড়ে ছিলেন বাংলায়, নেতাজি বাংলার। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে নিজের গায়েও আগুন লাগতে পারে। ভাঙার নয়, গড়ার খেলায় সামিল হও। আমরা পুশব্যাক করতে নয়, মানুষকে আশ্রয় দিতে শিখেছি।’ কটাক্ষের সুরে মমতার সংযোজন, ‘এত বিভাজন কেন? বাচ্চাদের স্কুলে গিয়ে খাদ্যে বিভাজন করা হচ্ছে! বাংলার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব ছিল না বলেই রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তোমরা দেশকে আত্মনির্ভর বানাবে কি করে? প্রচার করতে করতে আজ গান্ধীজিকেই তারা নিচে রাখছে! মা দুর্গার পায়ের নিচে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখতে হবে? ওখানে মহিষাসুর থাকে।’
চেতলা থেকে ভোটাধিকার নিয়ে সতর্কবার্তা মমতার, ‘পুজোর আগে বিজেপি এজেন্সিকে দিয়ে নাম তোলাচ্ছে খেয়াল রাখবেন। প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যাচ্ছে! একজন বাঙালির সঙ্গে দশজন গুজরাটি, পাঁচজন হরিয়ানার মানুষের নাম! এটা মজা হচ্ছে নাকি?’ এদিন ‘দুর্গাঙ্গন’ তৈরীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘কম করে হলেও দু’বছর সময় লাগবে নির্মাণে যাতে সৃষ্টিটি ভেঙে না পড়ে।’ মহালয়াতে সেলিমপুর পল্লী, বাবুবাগান, ৯৫ পল্লী এ্যাসোসিয়েশন, যোধপুর পার্ক, বান্ধব সম্মিলনী এবং চেতলা অগ্রণীর পুজো সশরীরে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করেছেন মমতা। পাশাপাশি তিনশো’টি জেলার পুজোরও ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছেন তিনি। এদিন যোধপুরের পুজোতে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক দেবাশীষ কুমার। চেতলার পুজোতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন-সহ প্রমুখ।