‘জমির আল’, ‘উঠোন’ ভাড়া দিয়ে সীমান্তে রমরমিয়ে চলছে পাচার কাজ

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি (Photo: iStock)

শহর কলকাতা বা তার পাশ্ববর্তী এলাকায় ব্যবসা চালানাের জন্য ফুটপাথ বিক্রির কথা শােনা যায়। এককালীন কিছু টাকা দেওয়ার পর প্রত্যেক মাসে বা প্রতিদিনই দিতে হয় টাকা। কিন্তু গ্রামের দিকে জমির সীমানায় আল নিয়ে ব্যবসার কথা শুনলে হয়তাে অনেকেই অবাক হবেন। দুটি জমির সীমানার মধ্যবর্তী অংশকে বলে আল। গ্রামের দিকে এই আল নিয়েও ব্যবসা চলে। কিন্তু এটাই সত্যি। এই আল ব্যবহার করা হয় রাতের অন্ধকারে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার কাজের করিডাের হিসেবে। শুধু আলই নয় এমনকি বাড়ির উঠোনও ভাড়া দেওয়া হয়।

দিনের আলাে ফুরােতেই পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের সীমান্তবর্তী গ্রাম হাকিমপুর, চারঘাট, বিথারী, বাদুড়িয়ার, যশাইকাটি, শায়েস্তানগর, গাইঘাটার আংরাইল, সুটিয়া, হাসনাবাদের বিভিন্ন তাঞ্চল। এইসব সীমান্তবর্তী এলাকায় জমির আল বা উঠোনের ভাড়া এক এক রকম। সীমান্ত থেকে যে জমি একদম কাছাকাছি সেই জমি বা আলের মালিক দিনপ্রতি ভাড়া হিসাবে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। অন্যদিকে যে আল বা জমি যতদুরে সেই জমির মালিক পান কম টাকা। যদিও তা ৫০০ টাকার নিচে নয়।

স্বরূপনগর হাকিমপুরের বাসিন্দা মুস্তাক হােসেন (নাম পরিবর্তিত) বলেন, সামান্য কিছু চাষের জমি আছে তার, চাষ করে কোনও রকমে সংসার চলে, তাই পাচারকাজ সঠিক নয় তা জেনেও দিয়েছেন তার ‘আল’ ভাড়া, যাতে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে একটু ভালােবাবে থাকতে পারেন। যদিও তিনি বলেন, প্রতিদিন একাজ হয় না। হয় মাঝে মাঝে।


গাইঘাটার আংরাইল সীমান্তে এলাকার বাসিন্দা পেশায় চায়ের দোকানদার সমীর বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত) বলেন, অনেক চাষি আছেন যারা পাচারের জন্য তাদের চাষের জমি ব্যবহার করতে দিতে চান না, কারণ ওই জমি দিয়ে যাতায়াতের ফলে চাষের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফসল নষ্ট হয়, কিন্তু উপায় নেই। চাষের জমি যাতায়াতের জন্য দেব না বললেই তাে তারা (পাচারকারীরা) শুনবে না। না বললে জোর করে ওই পথ ব্যবহার করবে পাশাপাশি ফসল নষ্ট করলেও কোনও টাকা পাওয়া যাবে না। যার ফলে সংসার চালানাে মুশকিল হয়ে যাবে।

কয়েকবছর আগে পাচারকারীদের চাষের জমির ওপর দিয়ে যাওয়া আসা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিলেন কয়েকজন। বাধা দিতে গেলে ধারালাে অস্ত্রে কোপ খেতে হয়েছে তাদের। এরপর থেকে এ’সাহস কেউ প্রায় দেখায়নি বললেই চলে। তাই ইচ্ছে না থাকলেও জমির আল বা চাষের জমি ব্যবহার করতে দিতে বাধ্য হই আমরা বলেন ওই চা বিক্রেতা।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে পাচারকারীদের সংঘর্ষও হয়েছে, ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনা নিয়ে। এরপ পুলিশ, বিএসএফ বা প্রশাসনের কর্তাদের কড়া নজরদারির ফলে পাচারকারীদের দাপট কিছুদিন কম হলেও কয়েকদিন পর আবার যেই কে সেই। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে এই পাচারের কাজ করে যারা, তারা রাতের অন্ধকারে আসে তারকাটা পেরিয়ে আবার কাজ শেষ করে ভােরের আলো না ফুটতেই পালিয়ে যায় তারা। তাই তাদের ধরতে অনেকখানি বেগ পেতে হয় পুলিশ বা বিএসএফ’কে।

সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের অভিযােগ, পাচারকারীরা কিভাবে বিএসএফ’এর চোখ এড়িয়ে এদেশে ঢােকে? এক্ষেত্রে বিএসএফ’এর নজরদারিতে ফাঁক আছে অভিযােগ করার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে পাচারকারীদের কোনও আঁতাত আছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তােলেন।

পাচারের সময় কোনওভাবেই ঘরের বাইরে বেরােনাে যাবে না, এরকমই নাকি নিয়ম পাচারকারীদের। কারণ এতে নাকি তাদের কাজে সমস্যা হয়। কোনও প্রকার সমস্যা হলেও মুখবন্ধ করে ঘরে থাকতে হয় গ্রামবাসীদের। ভয়ে অনেকেই ঘর থেকে বের হননা কারণ যদি কোনওভাবে পাচারকারীদের বিপদের আশঙ্কা হয় তবে আঘাত আসতে পারে ওই সমস্ত নিরীহ গরিব প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের।

বর্তমানে পুলিশ-বিএসএফ’এর নজরদারিতে পাচার কাজের পরিমাণ কমলেও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীরা চাইছেন পুরােপুরি বন্ধ হােক এই পাচার রাজ।

পড়ুন । বড়লােক হওয়ার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত সীমান্তের বেকার যুবকরা

পড়ুন । অচেনা মুখ দেখলেই মুখে কুলুপ সীমান্ত বাসীর