টানা বর্ষণে ভাসছে কলকাতা কাটছে না দুর্যোগ, আজ আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রতিকি ছবি (Photo:SNS)

দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কমার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। উল্টে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই জানানাে হয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে। সােমবার কলকাতা সহ দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

সেই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে। সেই সম্ভাব্লা বাস্তবায়িত হয়েছে এইসব জেলায় এদিন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুব একটা ঘর থেকে বের হননি।

আজ মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টিপাত হবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়। হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে। আগামী চব্বিশ ঘণ্টা মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।


প্রসঙ্গে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একটি ঘূর্ণাবর্তা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তার সংলগ্ন এলাকার উপর অবস্থান করছে। এই ঘূর্ণাবর্ত উপরের দিকে প্রায় ৫.৮ কিলােমিটার বিস্তৃত।

মৌসুমী অক্ষরেখা থেকে কলকাতার উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গিয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। ঘূর্ণাবর্তা এবং মৌসুমী অক্ষরেখা এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলায় মঙ্গলবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। কিছু কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টি নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকছে বৃষ্টির পাশাপাশি মানুষজনকে পাকাবাড়ির নিচে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা সহ একাধিক জেলা রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া দফতরের অন্যতম শীর্ষ কর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন আলিপুর, সল্টলেক এবং দমদমের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে গত চব্বিশ ঘণ্টায়।

এর ফলে নদীতে জলস্তর বেড়েছে রাজ্যের সেচমন্ত্রী ৬ সৌমেন মহাপাত্র এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিজে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখছেন এবং দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্লাবিত এলাকাগুলির উপর বিশেষ নজরদারি করছেন।

বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে সেই কারণে কলকাতাতে বিপজ্জনক বাড়ি খালি করার কথা বলা হয়েছে। যদিও আবহবিদদের একাংশ বলছেন, মঙ্গলবার বেলা যত বাড়বে কলকাতা সহ পূর্বদিকের জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে তবে বৃষ্টি বাড়বে পশ্চিমাঞ্চলে।

নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। এর আগে এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল ২০০৭ সালে। মাঝ রাত থেকে দফায় দফায় অঝােরে বৃষ্টিতে ভুগ্ধ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও হাঁটু সমান জল। এর মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হল শহরের সব লকগেট।

পুরসভা সূত্রে খবর, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ায় বন্ধ করা হয়েছে শহরের সব লকগেট। তবে বৃষ্টির দাপট কমলে দ্রুত জল নামানাের ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। দক্ষিণ কলকাতার একাধিক এলাকা জলের তলায়।

পার্কস্ট্রিট থেকে যােধপুর পার্ক, সাদান অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, উল্টোডাঙ্গা তােপসিয়া রাজাবাজার সহ গােটা এলাকা জলমগ্ন, কার্যত কলকাতা এখন ছােটখাট সমুদ্রের আকার নিয়েছে। সকাল থেকে লকগেট খােলা রাখা হলেও, এই মুহূর্তে শহরের সব লকগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

একদিকে শহরের রাষ্ট্রায় যাতে বেশি জল না জমে তার জন্য তৎপর রয়েছে পুরসভা। অন্যদিকে জোয়ারের জল আসায় বেশিক্ষণ লকগেট খুলে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। ধাপ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, পরিমাণ ১৪৬ মিমি। এছাড়াও বালিগঞ্জ, তপসিয়া, কালীঘাট, মােমিনপুরে বৃষ্টির পরিমাণ যথাক্রমে ১২৩ মিমি, ১৩০ মিমি, ১২৭ মিমি, ১১৬ মিমি।

এছাড়াও উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া, বেলগাছিয়াতেও বৃষ্টির পরিমাণ ১০০ মিমি ছাড়িয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই ভােগান্তির মুখে পড়লেন সাধারণ মানুষ। কর্মস্থলে যেতে পারলেন না অনেকেই। সকাল সকাল ব্যাপক সৃষ্টি হল রাস্তায়।