রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু

এবার রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হল। রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিপ্লবকান্তি দাশগুপ্তের মৃত্যু হয়েছে করোনাতে।

Written by SNS Kolkata | April 27, 2020 10:11 pm

প্রতিকি ছবি (File Photo by SAM PANTHAKY / AFP)

এবার রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হল। রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিপ্লবকান্তি দাশগুপ্তের মৃত্যু হয়েছে করোনাতে। শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ তিনি মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। এই প্রথম রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে কোনও চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ বেড়ে ছে স্বাস্থ্যভবনের। এই চিকিৎসক সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেরও দায়িত্বে ছিলেন।

রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। তারা আপাতত ভালোই রয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। করোনাতেই মৃত্যু হয়েছে চিকিংসকে এই দাবিকে সামনে রেখে রাজ্যের প্রথম সারির ৬টি চিকিৎসক সংগঠন সরব হল। রাজ্যকে স্বীকার করতেই হবে করোনাতে বিপ্লব দাশগুপ্তের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে কখনও কারও কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে সরব হয়নি চিকিৎসকদের সংগঠন। কিন্তু এবার দাবি উঠল, বিপ্লব দাশগুপ্তই রাজ্যের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথম চিকিৎসক শহিদ। সোমবার চিকিৎসক সংগঠনগুলি ডাক দিয়েছে, সকাল ১১টা নাগাদ রাজ্যজুড়ে ২ মিনিট নীরবতা পালন করতে বিপ্লববাবুর স্মৃতিকে সামনে রেখে।

৬টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় স্বাস্থ্য ভবন সেই সঙ্গে নবান্নের ওপর চাপ বাড়ল। ইতিমধ্যে ফেসবুকে পোস্ট করে সংগঠনের পক্ষ থেকে ২ মিনিট নীরবতা পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এবং প্রথম চিকিৎসক শহিদ বলেও ডা. বিপ্লবকান্তি দাশগুপ্তকে অভিহিত করা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল কোভিড ১৯ ধরা পড়ে বিপ্লববাবুর। বেলেঘাটা আইডিতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আইডি’তে চিকিৎসা চলার পর অবস্থার অবনতি হওয়ায়। সল্টলেকে আমরিতে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে এই চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ভেন্টিলেশনে স্থানান্তরিত করা হয় ওই চিকিৎসককে। সেখানেই গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

আমরি হাসপাতালের মিডিয়া রিলেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার দ্রিমি চৌধুরী জানিয়েছেন, রাত দেড়টা নাগাদ ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই চিকিৎসকের মৃত্যু করোনায় নাকি কো-মবিডিটির কারণে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যভবন এখনও সরকারিভাবে কিছু জানায়নি সংবাদ মাধ্যমকে। যদিও ওয়েস্ট ডক্টরস ফোরাম-এর সভাপতি অর্জুন দাশগুপ্ত শোক প্রকাশ করে বলেন, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ভোরের দিকে খবর পাই উনি মারা গিয়েছেন। সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বলব সতর্কভাবে নিয়ম মেনে কাজ করুন।

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ বিশিষ্ট চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, উনি আইএমএ-এর বর্ষীয়ান সদস্য ছিলেন। ওনাকে আমরা হারালাম। ওনার স্ত্রীও করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

সূত্রের খবর, মাসআটেক আগে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য এই চিকিৎসক এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এই স্বাস্থ্য অধিকর্তার অত্যধিক মাত্রায় সুগার এবং হাইপারটেনশন ছিল বলে জানা গিয়েছে। বিপ্লব দাশগুপ্তের মৃত্যুর পর এক চিকিৎসক সমুদ্র সেনগুপ্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘আজ খবর পেলাম। বিপ্লবদা চলে গিয়েছেন। আমাদের স্বাস্থ্য প্রশাসক ক্যাডারের প্রথম মৃত্যু। ফ্রন্টলাইনে যে ডাক্তারবন্ধুরা কাজ করছেন তারা যাতে ঠিকমত সুরক্ষা পান তার জন্য সবার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিপ্লবদা শেষ অবধি কাজ করে গেলেন একজন মাঝারি স্তরের আমলা হিসেবে। যার কোনও বড় মাপের নীতি ঠিক করার ক্ষমতা ছিল না। কেবল নিজের আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করার অভ্যাস ছিল মাত্র’।

‘হাসিমুখে নিখুঁতভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে বিপ্লবদা চলে গেলেন দুরে। জেলা থেকে যখন জুনিয়র হিসেবে স্বাস্থ্যভবনে যেতাম, তখন যে গুটিকয়েক সিনিয়রদের উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা পেতাম তার মধ্যে বিপ্লবদা ছিলেন অন্যতম। দু’জনে ভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন করলেও দাদা ভাইয়ের সম্পর্কে কখনও ছায়া পড়েনি তার। যুদ্ধের মধ্যে সিনিয়র কমান্ডার মারা গেলে শোক পালন করার বিলাসিতা দেখানোর সময় নেই। তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই জুনিয়র কমান্ডারদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।’