নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এবার আতঙ্কে বিক্ষোভে ফুঁসছে বাংলা

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এবার বাংলাতেও প্রতিবাদের পরিবেশ আশঙ্কার প্রহর গুনছে গােটা বাংলা। বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠল বিভিন্ন জেলায়।

Written by SNS Kolkata | December 15, 2019 1:17 pm

রেল অবরােধ করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। (Photo: Twitter/@ashutoshgabbar)

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এবার বাংলাতেও প্রতিবাদের পরিবেশ আশঙ্কার প্রহর গুনছে গােটা বাংলা। বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠল বিভিন্ন জেলায়। শুক্রবার সুত্রপাত হওয়ার পর এদিন তা মাত্রা ছাড়ালাে। কোথাও সড়ক অবরােধ আবার কোথাও রেল অবরােধ করে বিক্ষোভকারীরা। সকাল থেকেই পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। আইন শৃঙ্খলা আয়ত্বে আনতে একাধিক জেলায় নামানাে হয় র‍্যাফ। শনিবার সন্ধে পর্যন্ত অশান্তির বাতাবরণ অব্যাহত। বিপর্যস্ত জেলাগুলিতে জুরুরি প্রয়ােজন ছাড়া বাড়ির বাইরে প্রায় কেউই বের হওয়ার চেষ্টা করেনি। নেহাত কাজের খাতিরে যাদের শহরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারাও দিনের আলাে থাকতে থাকতে বাড়িমুখাে। সেখানেও বিপত্তি একাধিক এলাকায় পথ অবরােধে যান চলাচল বিপর্যক্ত হয়ে পড়ে।

বাংলার মালদা থেকে নামখানা, মুর্শিদাবাদ থেকে বাসিরহাট প্রতিবাদের ভাষা এবার অন্য পর্যায়ে পৌছাল। সব থেকে পরিস্থিতি সংকটে হাওড়া উলুবেড়িয়া এলাকার। শনিবার সকাল থেকেই হাওড়ার সাঁকরাইল অঞ্চলের চাপাতলা মােড়ে পথ অবরােধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে উত্তেজিত জনতা। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যা ক্রমেই বাড়তে শুরু করে। চাপাতলা মােড়ে একাধিক দোকানপাটে ভাঙচুর চালায় উন্মত্ত মানুষ। এখানেই শেষ নয় সন্ত্রাইল স্টেশনে ঢুকেও ভাঙচুর চালায় কিছু মানুষ। টিকিট কাউন্টারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। অদুরেই থাকা একটি পুলিশের গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি আয়রে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‍্যাফ নামে। ঘটনাস্থল আসেন হাওড়া জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকা। বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে এলাকায় টহলদারি শুরু করে পুলিশ। সারাদিনই সাঁকরাইল অঞ্চলে উত্তেজনার পরিবেশ অব্যহত থাকে। অন্যদিকে উলুবেড়িয়া স্টেশন চত্বরও লণ্ডভণ্ড করে দেয় আন্দোলনকারীরা। দীর্ঘক্ষন বন্ধ রাখা হয় টিকিট কাউন্টার। যার জেরে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

এরই মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সাঁতরাগাছির উনসানি মােড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে তাদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। যার জেরে আপ ও ডাউন কোনা এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব রেলওয়ের একাধিক ট্রেন পরিসেবা বাতিল করা হয়। রেল লাইনে নেমে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে বিক্ষুব্ধরা। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় ঘন্টা চারেকের ওপর যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাদানে গ্যাসের সেল ছোঁড়া হয়। সন্ধের পর হাওড়া আন্দুল রােডের নীমতলা ও মৌরিগ্রামের বেশ কিছু জায়গায় পথে নেমে ফের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে একটি দমকল বিভাগের গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে এই ঘটনার জেরে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মতাে সদা ব্যস্ত জাতীয় সড়কে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল থমকে যায়। বেশ কিছু দীঘা, মেচেদা ও ওড়িশা রুটের বাসগুলিকে বাখড়া দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী ধর্মতলা বাসডিপাে থেকে ওইসব রুটের বেশ কিছু বাস দেরিতে ছাড়ে। যাত্রীরা চরম অসুবিধার সম্মুখীন হয়। বেশ কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দুরপাল্লার বেসরকারী বাসের টিকিটের ভাড়াও বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযােগ করে সাধারণ যাত্রীরা।

অন্যদিকে মালদাতেও বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ কর্মসূচীতে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে হয়ে পড়ে বেশ কিছু এলাকায়। মালদার হরিশচন্দ্রপুর স্টেশনে ঢুকে চেয়ার টেবিল সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। স্টেশনের এক ক্লার্কের হতেও চোট লাগে। মাঝপথেই রেল অবরােধের সময় কাটিহার এক্সপ্রেসের ওপর পাথর ছোঁড়ে উন্মত্ত আন্দোলনকারীরা। যার জেরে রেলযাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে কালিয়াচকে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে এদিন কলেজ পড়ুয়ারাও পথে নামে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর চৌরঙ্গির মােড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। তাদের আন্দেলনে এলাকার সাধারণ মানুষ সামিল হলে বড় আন্দোলনের আকার নেয়। প্রায় ঘন্টা দেড়েক ওই জাতীয় সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। ঘটনাস্থলে পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে পরিস্থিতি মােকাবিলায় বিশাল বাহিনী হাজির হয়।

এছাড়া বাসিরহাট হাসনাবাদ এলাকাতেও একাধিক জায়গায় উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্ট হয়। রেল লাইনে নেমে বিক্ষোভ দেখানাে শুরু হলে হাসনাবাদ লােকাল দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়ে। অন্যদিকে কদম্বগাছি, ঘােড়াবাড়ি, কাকড়া মির্জানগর, আমিনপুর, শাসন সহ বাসিরহাটের বিস্তৃর্ণ এলাকায় কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে কোথাও বিপুল সংখ্যক মানুষ পথে নেমে স্লোগান দিতে শুরু করে। বিকেলের দিকে যশাের রােড, বামনগাছি, জয়পুর এলাকাতে ফের একবার বিক্ষুব্ধ মানুষ পথে নামলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে র‍্যাফ নামানাে হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়েছে বীরভূমেও। ক্যাব’র প্রতিবাদে মুরারইয়ে রেল অবরােধ করলে ডাইন শতাব্দী এক্সপ্রেস বাঁশলই স্টেশনে আটকে পড়ে। বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ আন্দোলন হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকাতেও। শিয়লদহ ডিভিশনের লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখায় রেলের ওভারহেডের তারের ওপর কলাপাতা ফেলে অবরােধে সামালি হয় সাধারণ মানুষ। ফলে ওই শাখায় সাত সকাল থেকেই দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, মহিপাল সহ বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভকারীদের রেল অবরােধের জেরে দুরপাল্লা ও লােকাল ট্রেনের যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘ সময় ট্রেন দাড়িয়ে থাকে। মুর্শিদাবাদের সুতিতে বাসে ভাঙচুর চালানাে হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি বাসে। রুঘুনাথগঞ্জেও বিক্ষোভে চাঞ্চল্য ছড়ায়। এছাড়া বেলডাঙয় শুক্রবারের পর ফের একবার শনিবার আন্দোলনের আগুনে উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রেলের যন্ত্রাংশে আগুন ধরিয়ে দেয় দুবৃত্তরা। এছাড়া লালগােলা স্টেশনেও আগুন ধরেিয় দিলে পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের পরিবেশ বজায় ছিল। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গােটা বাংলা জুড়েই শনিবারও বিক্ষোভে আন্দেলনে আতঙ্কের পরিবেশ অব্যাহত থাকে।