বাংলাদেশে বাড়ছে হিংসা, বাংলার দুটি সীমান্তে দুই উদ্বেগজনক চিত্র

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

গোটা বাংলাদেশ নতুন করে হিংসার আগুনে জ্বলছে। সেখান থেকে ফেরা ভারতীয়দের চোখে-মুখে আতঙ্ক, ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তার ছাপ স্পষ্ট। শনিবার বসিরহাট মহকুমার ঘোজাডাঙা আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভোর থেকেই এমনই দৃশ্য ধরা পড়ল।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির জেরে সেখানে থাকা বহু ভারতীয় নাগরিক দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। সীমান্তের ওপারে দীর্ঘ লাইন, হাতে সামান্য ব্যাগপত্র, কারও কোলে শিশু— সব মিলিয়ে এক চাপা উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এইসব মানুষের চেহারায়। এদেশে ফিরে আসা মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের কারণে সেখানে থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। কেউ কাজের সূত্রে, কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে কিংবা ব্যবসায়িক কারণে ওপারে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোরালো হতেই দ্রুত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

সীমান্তে ফিরে তাঁদের কারও মুখে স্বস্তির নিশ্বাস, আবার কারও চোখে জল। দীর্ঘ অপেক্ষা ও দুশ্চিন্তার পর অবশেষে নিজের দেশে ফেরার তৃপ্তি— সেই আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘোজাডাঙা সীমান্তে এদিন বিএসএফ ও ইমিগ্রেশন দপ্তরের তরফে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রত্যেক যাত্রীর বৈধ নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সকলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতেই এই সতর্কতা। সীমান্তে বাড়তি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।


সেখান থেকে ফিরে আসা একাধিক নাগরিক বাংলাদেশে তাঁদের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। কেউ বলছেন, হঠাৎ করেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়, দোকানপাট বন্ধ থাকে, চলাচলে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। আবার কারও কথায়, পরিবার-পরিজনের চাপে দ্রুত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে থাকা পরিবারগুলির মধ্যে উদ্বেগ ছিল সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো। সীমান্ত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও এই দৃশ্য দেখে চিন্তিত। তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানবিক দিক মাথায় রেখে দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে নাগরিকদের ফেরানোর দাবি উঠেছে।

এই আবহেই শনিবার ভোররাতে আরও এক উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশু পাচারের চেষ্টা চলাকালীন তাড়া করতে গিয়ে ঘন কুয়াশায় একা হয়ে যান এক বিএসএফ জওয়ান। সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ওই জওয়ানকে অপহরণ করে।

বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহৃত জওয়ানের নাম বেদ প্রকাশ। তিনি কোচবিহারের বিএসএফ ১৭৪ ব্যাটালিয়নের অর্জুন ক্যাম্পে কর্মরত। শনিবার রাতের ডিউটির সময় জওয়ানরা দেখতে পান, ফাঁকা সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশুর একটি দল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। তাদের তাড়া করতে গিয়ে বেদ প্রকাশ কিছুটা এগিয়ে যান। ঘন কুয়াশার কারণে তিনি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ২১ তারিখ ভোর ৪টা ৪৫ নাগাদ বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা গবাদি পশু-সহ তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়।

পরে দুষ্কৃতীরা ওই জওয়ানকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির হাতে তুলে দেয়। খবর পাওয়া মাত্রই ভারতের তরফে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার। বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, জওয়ান বর্তমানে আঙ্গারপোতা বিওপিতে রয়েছেন এবং তিনি সুস্থ আছেন। তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিএসএফ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অতীতেও একই ঘটনা ঘটেছে। এদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং স্থানীয় জওয়ানদের বিশেষ ভাবে সতর্কতা থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একদিকে আতঙ্কিত নাগরিকদের দেশে ফেরা, অন্যদিকে সীমান্তে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য— এই দুই ঘটনার মিলিত ছবি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পরিস্থিতি এখন বিশেষ ভাবে সংবেদনশীল। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।