নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসত, ২০ জুন: বাচ্চা চুরির ‘গুজব’ ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সদর বারাসত জুড়ে। গুজব থেকে দূরত্ব বজায় রাখার সতর্কবার্তা আগেও দেওয়া হয়েছিল বারাসত পুলিশের তরফ থেকে। কিন্তু তার ফলে সেভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এই আবহেই বৃহস্পতিবার গুজব ঠেকাতে পথে নামলেন বারাসত পুলিশ জেলার খোদ পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া। শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের টহলদারি দেওয়ার পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম চালু করা হল পুলিশের পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য, বুধবার ছেলেধরা সন্দেহে এক মহিলা সহ তিনজনকে বারাসতের দু’জায়গায় গনপিটুনি দিয়েছিল ক্ষিপ্ত জনতা। পুলিশ কড়া হাতে সেই পরিস্থিতির সামাল দিয়েছিল। সেই ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই, এবার পথে নেমে পড়লেন বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার নিজেই। শহর জুড়ে টহল দেওয়ার পাশাপাশি ঘটনাস্থল (যে স্থানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল) সংলগ্ন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে গুজবের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের সচেতন করতেও দেখা গেল খোদ পুলিশ সুপারকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং এসডিপিওকে সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার। নিজের হাতেই সচেতনতার লিফলেটও বিলি করেছেন তিনি।
পুলিশ সুপারের স্পষ্ট বার্তা, বারাসত পুলিশ জেলায় শিশু চুরির কোন ঘটনা ঘটেনি। গুজবে কান না দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার পরামর্শও দিয়েছেন পুলিশ সুপার। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে চব্বিশ ঘণ্টার জন্য যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, সেই কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০৩৩-২৫৪২৬১৫৪ এবং ৯১৪৭৮৮৮১৬৫। উল্লেখ্য, বারাসতে ছেলেধরা-সন্দেহে গণপিটুনি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বাচ্চা চুরির গুজব রটানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১৯ জন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ১৬ জনকে গনপিটুনি সহ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে গনপিটুনি, প্রাণে মারার চেষ্টা সহ পুলিশকে আক্রমণ করা এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বাকি তিনজনকে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ধৃতদের পরিচয়ও দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে। তাঁরা হলেন প্রীতম মিস্ত্রি, শেখ মিজানুর রহমান এবং পায়েল তালুকদার। এদের বাড়ি বারাসতের কাজিপাড়া এবং অশ্বিনিপল্লি এলাকায়। বৃহস্পতিবার ধৃত ১৯ জনকেই বারাসত আদালতে তোলা হয়। জানা গেছে, চার জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের জেলও হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এ প্রসঙ্গে বারাসতের বাসিন্দা তর্নিষ্ঠা ঘোষ বলেন, কিছু মানুষ গুজব ছড়াচ্ছেন। বারাসত শহরে এই ধরনের ঘটনা আগে কখনই ঘটেনি। কিন্তু এখন কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। পুলিশের ভূমিকা বেশ ভালো। স্থানীয় গৃহবধু শুভ্র নন্দী বলেন, স্কুলের সামনে পুলিশ মোতায়েন কিছুদিন থাকলে ভালো হয়। আমরাও বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। এখন পুলিশ সুপারের কথায় স্বস্তি মিলেছে।
Advertisement
Advertisement
Advertisement



