• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

মাত্রাতিরিক্ত বিল জমা না দিলেও কাটা যাবে না বিদ্যুতের লাইন

মন্ত্রীর নির্দেশ মতো শনিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সিইএসসি জানিয়েছে কেন এবার বিদ্যুতের বিল বেশি এসেছে।

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

লাগামছাড়া বিদ্যুৎ বিলের বোঝায় নাজেহাল রাজনৈতিক নেতা থেকে অভিনেতা। সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের বিল কেন বেশি হচ্ছে তা নিয়ে সিইএসসি’র দুই পদস্থ কর্তার সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রীর নির্দেশ মতো শনিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সিইএসসি জানিয়েছে কেন এবার বিদ্যুতের বিল বেশি এসেছে। কিন্তু সিইএসসি’র সেই ব্যাখ্যাও সন্তোষজনক মনে হয়নি আমজনতার কাছে।

শনিবার নবান্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাডভাইসরি পাঠানো হবে সিইএসসিকে। সেখানে কড়া বার্তা দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে। বলা হবে আগামী একমাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ বিলের যাবতীয় ভুলত্রুটি সংশোধন করতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত বিল জমা না দিতে পারলেও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবেনা।

Advertisement

আম্ফানের সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করতে দেরি হওয়ায় জনরোষ তৈরি হয়েছিল। তখনও রাজ্য সরকার সিইএসসিকে দুষেছিল। এবার এল মাত্রাতিরক্ত বিদ্যুতের বিল। স্বয়ং বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরই অস্বাভাবিক বিদ্যুতের বিল এসেছে। একইভাবে ভুক্তভোগির তালিকায় রয়েছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা যশ প্রমুখ।

Advertisement

গত কদিন ধরে সাধারণ মানুষও বিভিন্ন সিইএসসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। সিইএসসি’র দাবি লকডাউনের সময় এপ্রিল এবং মে মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই সময় অনুমানের ভিত্তিতে (নোশানাল) বিল পাঠানো হয়েছে। যা বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিরিখে অনেকটাই কম ছিল। জুন মাস থেকে মিটার রিডিং নেওয়া শুরু হয়েছে। ফলে ওই দু’মাসের কম নোশনাল মিটার রিডিং অ্যাডজাস্টমেন্টের ফল এবারের বিল বেশি এসেছে।

এছাড়া গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার তত্ত্বও দেওয়া হচ্ছে। জুলাই মাসের মাত্রাতিরিক্ত এই বিল জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইনস্টলমেন্টের সুবিধের কথাও ঘোষণা করেছে সিইএসসি। কিন্তু সিইএসসি’র ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, প্রকৃত চিত্রটা কিন্তু অন্যরকম।

প্রথমত বর্তমান ব্যবস্থায় মিটার রিডিং নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিইএসসি’র তরফে মেসেজ আসে গ্রাহকদের রেজিস্টার্ড মোবাইলে। জুন মাসে যখন মিটার রিডিং নেওয়া হয়েছিল সেই সময়ে আসা মেসেজের সঙ্গে জুলাই মাসে আসা ইলেকট্রিক বিলে নথিবদ্ধ রিডিং (প্রেজেন্ট রিডিং, প্রিভিয়াস যেখানে স্টার মার্ক দেওয়া)-এর কোনও সামঞ্জস্য নেই বহু বিলেই। ফলে এক্ষেত্রে সিইএসসি নিজেরাই নিজেদের স্ববিরোধী তথ্য দেওয়ার দায়ে পড়তে পারে।

দ্বিতীয়ত প্রত্যেক গ্রাহক প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সময় যে সিকিউরিটি ডিপোজিট সিইএসসি’কে জমা দেয়, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে সেই ডিপোজিট বাবদ একটা সুদ এপ্রিল মাসের বিলে (যে বিলটা জমা দেওয়া হয় মে মাসে) ছাড় পাওয়া যায়। নতুন করে জুলাই মাসে যে বিল পাঠানো হয়েছে সেখানে কৌশলগতভাবেই সেই সুদ ছাড়ের অঙ্কটি ধরা হয়নি অনেক ক্ষেত্রে।

এছাড়াও এপ্রিল ও মে মাসের নোশানাল বিল অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য বহুক্ষেত্রেই জুলাই মাসে পাঠানো বিদ্যুৎ বিলে ইউনিটের ধার্য স্ল্যাব বেড়ে গিয়েছে। এভাবেও বিদ্যুৎ বিলের অঙ্ক বেড়ে গিয়েছে। এই বিষয়গুলি নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না সিইএসসি অফিসগুলি।

অভিযোগপত্রের পাহাড় জমতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। চলছে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের অবিলম্বে বিদ্যুৎ বিল সংশোধনের জন্য সিইএসসি’কে পাঠানো বার্তা স্বস্তি দিল আমজমতাকে। একই সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত বিল দিতে না পারলে বিদ্যুৎ সংযোগ না কাটার নির্দেশ রক্ষাকবচ হয়ে রইল সিইএসসি’র বিদ্যুৎ উপভোক্তাদের কাছে।

Advertisement