মঙ্গলবার শুরু হয়ে গেছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর। আর এদিনই এনআরসির আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন এক ব্যক্তি, দাবি পরিবারের। নাম প্রদীপ কর, বয়স ৫৭ বছর। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির মহাজ্যোতি নগরে। এদিন সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় খড়দহ থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃতদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট পেয়েছে পুলিশ। তাতে লেখা রয়েছে, ‘আমার মৃত্যু এনআরসির জন্য।’
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, সকালে খবর পেয়ে প্রদীপ যে আবাসনে থাকেন, সেখানে যায় পুলিশ। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে। বাড়ির লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এনআরসি নিয়ে নানা খবর নিয়ে প্রদীপ চিন্তিত ছিলেন। মুরলীধর বলেন, ‘গতকাল এসআইআর-এর ঘোষণা হয়। ওঁর পরিবারের দাবি, তার পর থেকে উনি অস্থির হয়ে ওঠেন। বাড়ির লোক ভেবেছিলেন, অসুস্থবোধ করছেন। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে শুতে চলে যান নিজের ঘরে। সকালে ওঁর ভাইয়ের স্ত্রী অনেক বার ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। এর পর বাড়ির অন্য সদস্যেরা এবং প্রতিবেশীরা ঘরে ঢুকে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন। আমরা দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছি। তদন্ত চলছে।’
Advertisement
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘এমন মৃত্যু ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি গভীর আঘাত। বছরের পর বছর ধরে বিজেপি সাধারণ মানুষকে এনআরসির ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, মিথ্যা প্রচার করেছে। নিরাপত্তাহীনতা হাতিয়ার করে ভোট আদায় করেছে। এই মৃত্যু সরাসরি সেই বিভাজনমূলক রাজনীতির ফল।‘
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘যারা দিল্লিতে বসে জাতীয়তাবাদের পাঠ দিচ্ছে, তারা সাধারণ ভারতীয়দের এমন হতাশায় ঠেলে দিয়েছে যে মানুষ নিজের দেশে ‘বহিরাগত’ হওয়ার ভয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, এই নিষ্ঠুর খেলা এখনই বন্ধ করুন।‘
কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বাংলা কখনও এনআরসি মেনে নেবে না। কেউ আমাদের মানুষের মর্যাদা বা অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না। আমাদের মাটি, মা, মানুষ – এগুলোই আমাদের। যারা ঘৃণার রাজনীতি করে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলা প্রতিরোধ করবে, বাংলা রক্ষা করবে, বাংলা জয়ী হবে।‘
এই ঘটনায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘প্রদীপ করের মৃত্যুর দায় অমিত শাহ ও জ্ঞানেশ কুমারের। তাহলে ওদের নামে এফআইআর দায়ের হবে না কেন?’
আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে এ রাজ্যে এসআইআর চালু হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তার মাঝে পানিহাটির আত্মহত্যার ঘটনা এবং মুখ্যমন্ত্রীর কড়া প্রতিক্রিয়া ঘিরে নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে। এ দিন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
Advertisement



