রাজ্যের বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কি এবার ভোটের দামামা বাজাতে চাইছে কেন্দ্র? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাম্প্রতিক মন্তব্যে সেই জল্পনাই বেড়েছে রাজনৈতিক মহলে। মঙ্গলবার কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে শাহ যে সময়সীমার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ধরেই নিচ্ছে— এপ্রিল মাসের মধ্যেই শুধু ভোট নয়, সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হতে পারে।
বিজেপি সূত্রের খবর, শাহের এই বক্তব্য লঘু করে দেখা হচ্ছে না। বরং গেরুয়া শিবিরকে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দলের অন্দরমহলে ভোটের সম্ভাব্য দফা, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে।
সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহ বলেন, ‘এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। ভয়, দুর্নীতি, অপশাসন আর অনুপ্রবেশের বদলে পরম্পরা, উন্নয়ন আর গরিব কল্যাণের সরকার চায় বাংলা।’ এই মন্তব্যের পরই তিনি আরও স্পষ্ট করে দেন, ‘২০২৬ সালের ১৫ এপ্রিলের পরে যখন বিজেপির সরকার হবে, তখন থেকেই বঙ্গসংস্কৃতি ও বঙ্গগৌরবের পুনর্জাগরণ শুরু হবে।’
শাহের এই তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এতদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলে আসছিলেন, ২০২৬ সালের ৪ মে বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে। তাঁর যুক্তি ছিল, এসআইআর প্রক্রিয়ায় বাধা এলে ভোটার তালিকা তৈরি বিলম্বিত হতে পারে, যার ফলে ভোট পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সময়মতো ভোট না হলে রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
কিন্তু শাহের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে, কার্যত ভোট পিছোনোর কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং আগেভাগেই ভোট সেরে ফেলতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে ভোটের দফার সংখ্যাও কমতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ এপ্রিলের মাঝামাঝি সরকার গঠন করতে হলে এক বা দুই দফার বেশি ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়। ফলে আগের মতো ছয়, সাত বা আট দফায় ভোট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আট দফায় ভোট হয়েছিল। প্রথম দফা শুরু হয়েছিল মার্চের শেষ সপ্তাহে, শেষ দফা এপ্রিলের শেষে। তার আগের দুই লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যে সাত দফায় ভোট হয়েছে। কিন্তু এ বার সেই চেনা ছক ভাঙতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে মতুয়া সমাজের মধ্যে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অমিত শাহ বলেন, ‘মতুয়াদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। যাঁরা শরণার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক। বিজেপির প্রতিশ্রুতি, তাঁদের কারও ক্ষতি হতে দেওয়া হবে না।’ এই আশ্বাস দেওয়ার সময় তাঁর পাশে ছিলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, এসআইআর প্রক্রিয়ায় যাতে মতুয়া সমাজের কোনও মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে, সে জন্য আইনি ও প্রশাসনিক স্তরে বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে। এ নিয়ে শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে শাহ আলাদা করে আলোচনা করেছেন বলে সূত্রের খবর।
সব মিলিয়ে, অমিত শাহের একাধিক মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে স্পষ্ট করে দিচ্ছে, এ বার বিধানসভা নির্বাচন শুধু সময়ের আগেই নয়, তুলনামূলকভাবে কম দফায় সম্পন্ন হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও বাকি, তবু রাজনৈতিক ময়দানে আগাম ভোটের প্রস্তুতির সাইরেন ইতিমধ্যেই বেজে গিয়েছে।