নিউটাউনে বাংলার ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক স্থায়ী কেন্দ্র গড়ে তোলার পথে আরও এক ধাপ এগোতে চলেছে রাজ্য সরকার। সোমবার নিউটাউন বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে অ্যাকশন এরিয়া–ওয়ানে প্রায় ১৭ একরেরও বেশি জমিতে দুর্গা অঙ্গন প্রকল্পের ভূমিপূজা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বৃহৎ প্রকল্পে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা।
প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী, দুর্গা অঙ্গনের মূল প্রবেশপথটি নির্মিত হবে একটি মন্দিরের আদলে। সেখান থেকে দু’পাশে বিস্তৃত সবুজ ঘাসের চাদরের মধ্য দিয়ে মার্বেলের রাস্তা ধরে দর্শনার্থীরা পৌঁছতে পারবেন মন্দিরের মূল অংশে। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, পুরো পরিকাঠামো এমনভাবে পরিকল্পিত হচ্ছে, যাতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই প্রাঙ্গণে এসে সময় কাটাতে পারেন।
শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের দাবি, দুর্গা অঙ্গন কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে বাংলার শিল্পকলা, লোকসংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য আলাদা পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী এবং ঐতিহ্যভিত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটি এক স্থায়ী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হবে বলেই আশা।
উল্লেখ্য, চলতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরবর্তী সময়ে ওই মন্দিরে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। এর পাশাপাশি, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মাটিগাড়ায় নতুন মহাকাল মন্দির নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক মহলের মতে, এই সমস্ত উদ্যোগ রাজ্যের ধর্মীয় পর্যটনকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০২১ সালে ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো। সেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় দুর্গা অঙ্গন পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যে আরও একটি নতুন পালক যোগ করবে। ভবিষ্যতে এটি দুর্গার নিত্যপুজোর একটি স্থায়ী আঙিনা হয়ে উঠবে বলেই আশা।
দিঘার জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা হিডকোকেই দুর্গা অঙ্গন প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে দুর্গা অঙ্গন রাজ্যের অন্যতম বড় পর্যটন ও সাংস্কৃতিক আকর্ষণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
যদিও এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই দাবি করেছিলেন, সরকারি অর্থে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করা সংবিধানসম্মত নয়। তবু সেই আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্য সরকার তাদের অবস্থানে অনড়। তাই শিলান্যাসের পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে সমালোচনার সুর আরও চড়া হবে বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ।