রাজ্যের মাছ চাষে আসছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। এবার আর পুরনো নিয়মে দরপত্র নয়, পাঁচ একরের বেশি সরকারি বা খাস জলাভূমিতে মাছ চাষের সুযোগ মিলবে ডিজিটাল অকশানের মাধ্যমে। মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই নতুন ব্যবস্থায় শুধু প্রশাসনিক কাজই নয়, পুরো প্রক্রিয়াই হবে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সহজ উপায়ে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত ‘কমিটি অব মিনিস্টার্স’-এর প্রস্তাবে এই উদ্যোগকে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংশোধিত হয়েছে ১৯৯১ সালের পশ্চিমবঙ্গ ভূমি ও ভূমি সংস্কার ম্যানুয়াল। ফলে, এবার বড় জলাশয়গুলির ব্যবস্থাপনা ও চাষের দায়িত্ব বণ্টনে যুক্ত হচ্ছে ডিজিটাল প্রক্রিয়া, যা রাজ্যের মৎস্য শিল্পকে এক নতুন যুগে প্রবেশ করাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, পাঁচ একরের বেশি জলাভূমির বার্ষিক লিজের পরিমাণ যদি এক লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে, তবে জেলা স্তরের কমিটিই অকশান আয়োজন করতে পারবে। আগে এই সীমা ছিল মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ফলে প্রশাসনিক কাজ আরও দ্রুত সম্পন্ন হবে। একই সঙ্গে, প্রথমবারের মতো মাছ চাষে যুক্ত বেসরকারি উদ্যোক্তারাও অকশানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
Advertisement
তবে ছোট ও মাঝারি মাছ চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার রেখেছে বিশেষ ছাড়। স্থানীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, ফিশ প্রোডাকশন গ্রুপ এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটিতে এবার যুক্ত থাকবেন ক্ষুদ্র সেচ দপ্তরের আধিকারিকও, যাতে খাল ও জলাধার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনও জটিলতা না থাকে।
মৎস্য দপ্তর ইতিমধ্যেই একটি পৃথক অনলাইন পোর্টালের কাজ শুরু করেছে, যার মাধ্যমে অকশান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। সেখানে আবেদন থেকে শুরু করে ফলাফল প্রকাশ— সবই হবে ডিজিটালভাবে। প্রশাসনের মতে, এতে দুর্নীতির সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে এবং রাজ্যের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
এক প্রবীণ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পদক্ষেপ শুধু মাছ চাষকে আধুনিক করবে না, বরং গ্রামের অর্থনীতিতেও নতুন গতি আনবে। এখন চাষিরা ঘরে বসেই লিজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের জলাশয় চাষে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। তাঁদের ভাষায়, রাজ্যের মাছ চাষ যখন দেশের অন্যতম উৎপাদন ক্ষেত্র হয়ে উঠছে, তখন ডিজিটাল অকশান সেই উন্নতির স্বচ্ছ ও কার্যকর ভিত্তি গড়ে দেবে।
Advertisement



