কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ ডেরেক, পাল্টা সুর বিজেপি’র

তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও' ব্রায়েন (File Photo: IANS)

করোনা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য তরজা তুঙ্গে। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার রাজ্যে আসে দু’টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কিন্তু রাজ্যের অভ্যন্তরীণ করোনা মোকাবিলায় কেন কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করছে? তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রাজ্যে আসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের চুড়ান্ত বিরোধিতা করে জানান, রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এই তৃণমূল সাংসদ বলেন, রাজ্যে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। লকডাউন সফল করার জন্য সর্বোত্তম চেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রশাসনের তরফে এই কাজ যদি অন্য কেউ করতে চায় তাহলে তার নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি রয়েছে। তা না মানলে সমস্যা বাড়বে বলে জানান তিনি।


পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে ডেরেক ও’ ব্রায়েন জানান, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজিম করার জন্য যদি আসার তিন ঘণ্টা পর মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয় এবং মুখ্যসচিবকে আসার, ত্ম মিনিট আগে জানানো হয়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নীতিবিরুদ্ধ।

এখানেই থেমে যাননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন এই তৃণমূল সাংসদ। তিনি জানতে চান, কিসের উপর ভিত্তি করে নির্বাচিত রাজ্যগুলিতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র? কি কি কারণে এই সিদ্ধান্ত? মোটের উপর রাজ্যের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাচাই করতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর তীব্র আঘাত বলেই মনে করছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, এদিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের টুইট প্রসঙ্গেও কড়া জবাব দেন ডেরেক ও’ ব্রায়েন। তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের টুইটারহ্যাপি রাজ্যপাল নয়, যাকে কেন্দ্র মনোনীত করেছে। তিনি রাজ্যের মানুষের সমর্থন পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে। দিল্লি, গুজরাতের কেউ তাঁকে মনোনীত করেননি।

এদিকে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তরফে। বেশ কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে জানানো হয় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা। কিন্তু বিনা নোটিশে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে আসায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উল্লঙঘন হয়েছে বলেই জানান তিনি।

অন্যদিকে শুধু তৃণমূল নয়, এই ইস্যুতে পাল্টা সুর চড়িয়েছেন বিজেপি নেতারা। রাজ্যের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে অভিযোগ জানানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় মঙ্গলবার টুইট করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন।

তিনি লেখেন, আমরা শুধুমাত্র করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছি না। কভিড-এর থেকেও রাজ্য সরকার ভয়ানক ভাইরাস, এমনটাও মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ হেনে বাবুল সুপ্রিয় জানান, দিদি নামক ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। অন্যদিকে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু জানান, প্রয়োজনে তাঁরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানাবেন।

এদিকে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে আসার ঘটনায় কার্যত রাজ্যের পাশেই দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি জানান, এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র বিবৃতি এবং বুলেটিন দিয়ে নিজের দায়িত্ব সেরেছে কেন্দ্র। এতদিন পর হঠাৎ করে বোঝা গেল কেন্দ্রে সরকার আছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল পাঠানো উচিত ছিল বলে জানান তিনি।

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি এই সিপিএম নেতা। তিনি জানান, তৃণমূল যখন বিরোধী দল ছিল তখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল চাইত। এখন কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিরোধিতা ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। তবে কেন হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সেলিম।