রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদা প্রয়াত

সুকুমার হাঁসদা । (Photo: Facebook/@Dr.SukumarHansda)

প্রয়াত হলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার, ঝাড়গ্রামের বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। বৃহস্পতিবার কলকাতার অ্যাপােলাে হাসপাতালে ১১ টা ২০ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডেপুটি স্পিকার। তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্র বর্তমান। 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মৃত্যুতে শােকপ্রকাশ করে টুইট করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ও ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শােকাহত। তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতিও ছিলেন। মানুষের প্রতি তাঁর নিরন্তর সেবার জন্য তিনি সর্বদা স্মরণীয় থাকবেন। ডা. হাঁসদা তাঁর সারা জীবন আদিবাসীদের উন্নয়নব্রতে উৎসর্গ করেছিলেন। আদিবাসী আন্দোলনে ও আদিবাসী মানুষের কল্যাণসাধনে তাঁর ভূমিকা ও অবদান ছিল বিরাট। আদিবাসী সমাজের অভ্যন্তরে থেকে তিনি তাদের বিকাশে নিজের জীবন অতিবাহিত করেন। 

তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের প্রতি সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালে এসে তাঁর মরদেহে মালা দেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুবাব জানান, তিনি যখন ২০১১ সালের বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসেন তখনও তাঁর আড়াই বছর চাকরি বাকি ছিল। সরকারি চিকিৎসক ছিলেন। কার্যত আমার অনুরােধেই তিনি ইস্তফা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আমৃত্যু সুসম্পর্ক ছিল সুকুমার হাঁসদার।


দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় একমাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। তিনি মারণ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সুকুমার হাঁসদার বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুর এলাকায়। তবে তাঁর আদিবাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের অদুরে দুবরাজপুর গ্রামে। ২০১১ সালে তাঁর প্রথম রাজনীতিতে আসা। সুকুমারবাবু ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর বাবা প্রয়াত সুবােধ হাঁসদা সত্তর দশকে কংগ্রেস সরকারের কেন্দ্রীয় খনি, ইস্পতি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ছিলেন।

বাবা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেও সুকুমারবাবু কোনওদিন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বর্তমান রাজ্য সরকারের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তিনি রাজনীতিতে আসেন এবং বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ঝাড়গ্রাম আসন (সাধারণ) থেকে জয়লাভ করেন। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে পরপর দু’বার ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসন থেকে জয়ী বিধায়ক ছিলেন । তৃণমুলের সরকার প্রথম রাজ্যে ক্ষমতায় আসে ২০১১ সালে। সেই বছর তিনি পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন।

তবে ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার ঝাড়গ্রাম আসন থেকে জয়লাভ করলেও তাঁকে আর মন্ত্রী করা হয়নি। তবে ২০১৮ সালে বিধানসভায় ডেপুটি স্পিকারের পদ পান। এছাড়াও তিনি পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ পরিচালিত ঝাড়গ্রামে রাজত্তরীয় জঙ্গলমহল উৎসবকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য তিনি সামনে থেকে পরিচালনা করেছেন। 

বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা ডেপুটি স্পিকার সুকুমারবাবুর মৃত্যুতে শােকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। সােশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর অনুগামীরা অবদানের কথা তুলে দরে শােকবার্তা পােস্ট করেছেন। ঝাড়গ্রাম জেলায় সুকুমারবাবুর আদিবাসী মানুষজন সহ অন্যান্যদের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। 

চিকিৎসক পেশায় আসার আগে তিনি কম বয়সে খুব ভালাে ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে ফুটবল পায়ে নিয়ে খেলে নিতে। এহেন একজন জননেতার প্রয়াণের খবরে সকাল থেকেই ঝাড়গ্রামে শােকের স্বয়া।