দিল্লিতে পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে : মমতা

দিল্লির ঘটনা নিয়ে নাম না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Kolkata | March 3, 2020 2:04 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (Photo: IANS)

রবিবার শহিদ মিনারে অমিত শাহের সভার পর চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি। দিল্লির ঘটনা নিয়ে নাম না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজরাত মডেলের কায়দায় দিল্লিতে দাঙ্গা বাঁধানাে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সােচ্চার হলেন নেত্রী। সােমবার নেতাজি ইন্ডাের স্টেডিয়ামে মমতা প্রতিবাদী কণ্ঠে বললেন, দিল্লিতে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা ঘটানাে হয়েছে। পরে তা সাম্প্রদায়িকতা বলে চালানাে হয়েছে। আমরা একে ধিক্কার জানাচ্ছি।

মমতা প্রশ্ন তােলেন, দিল্লিতে ছক কষে মানুষ খুন করা হল। সাতশ মানুষ এখনও নিখোঁজ। নালা থেকে লাশ বেরােচ্ছে। দিল্লির মতাে একটা ছােট রাজ্যে পুলিশের সামনে এরকম ঘটনা ঘটে কী করে? পরােক্ষে অমিত শাহকে উদ্দেশ করেন মমতা এদিন বলেন, দিল্লিতে এতবড় ঘটনার পর তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। অথচ একবারও ক্ষমা চাননি। দুঃখপ্রকাশ করেননি। এই ঔদ্ধত্যের জবাব মানুষ দেবে এটাই মনে করিয়ে দেন মমতা। তাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলা দখলের কথা বললেও তা যে বাস্তবে সহজ হবে না।

দিল্লির ঘটনাকে ইস্যু করে মমতা এদিন রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিলেন, যতদিন না কেন্দ্র থেকে এই বিজেপি সরকারকে উৎখাত করা যাবে, ততদিন পর্যন্ত প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তিনি। এদিন শুরু থেকেই দিল্লির ঘটনাকে ইস্যু করে তােপ দাগেন মমতা।

বক্তব্যের প্রথমার্ধেই জানিয়ে দেন, দিল্লির ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত। দিল্লির ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি শােকজ্ঞাপনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় সােমবার নেতাজি ইন্ডাের স্টেডিয়ামে। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও ব্রায়ানের নেতৃত্বে একটি তহবিল গঠন করারও নির্দেশ দেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। যে তহবিল থেকে দিল্লির ঘটনায় যাঁরা ঘড়বাড়ি হারিয়েছেন তাদের সাহায্য করা হবে। এমনকী যারা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছেন দিল্লি থেকে তাদের জন্য বাংলার দরজা খােলা বলে আশ্বাসও দেন।

দিল্লির সাম্প্রতিক ঘটনাই যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় সকারকে কোণঠাসা করার মােক্ষম অস্ত্র তা এদিন বুঝিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার অমিত শাহ কলকাতায় আসার পর বাম কংগ্রেস কালাে পতাকা দেখালেও তৃণমূলের তরফে কোনও বিক্ষোভ দেখানাে হয়নি। এই নিয়ে রাজ্যের বিরােধীরা কটাক্ষ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রীকে। তারই জবাবে সােমবার দিল্লির ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুললেন মমতা। এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বারবারই শাসক সরকারকে আক্রমণ করে বিজেপি। এদিন সেই আইন শৃঙ্খলার প্রসঙ্গ টেনেই কেন্দ্রীয় সরকারের ও আক্রমণ শানান মমতা।

মমতার কথায় দিল্লির আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। ওদের হাতে পুলিশ রয়েছে, আধা সামরিক বাহিনী রয়েছে, সিআইএসএফ, এসএসবি রয়েছে। তার পরেও হিংসার ঘটনায় এত মানুষ মারা যায় কী করে? রবিবার বিজেপি’র সমাবেশে কিছুজনকে গােলি মারাে স্লোগান দিতে শােনা গিয়েছে। মমতা বলেন, এই স্লোগান প্ররােচনামূলক। এখানে যারা এই স্লোগান তুলেছিল, তাদের অ্যারেস্ট করানাে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মমতা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, এটা কলকাতা, দিল্লি নয়।

দেশজুড়ে বিজেপি সরকারের অত্যাচারী ভূমিকা তুলে ধরতে মমতা এদিন ভিন্ন রাজ্যের দৃষ্টান্ত দেন। বলেন, দিল্লির সুরক্ষার ভার তাদের হাতে থাকলেও সেখানে রক্ত ঝরিয়েছে। অসমে জিতে মানুষকে ভিটেছাড়া করে ছেড়েছে। ত্রিপুরায় বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মানুষ অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে গুলি মেরে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা বাংলা। এখানে গােলি মেরে কাউকে ওড়ানাে যাবে না।

মমতার অভিযােগ, বিজেপি সরকারের হাতে ভারতের মর্যাদাহানি হচ্ছে। ওরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে। মনীষীদের নাম মুছে দিচ্ছে। ইতিহাস বদলে দিচ্ছে। এমনকী বিজেপিই ঠিকমতাে শেখাতে পারেনি বলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বামী বিবেকানন্দের নাম ঠিকমতাে উচ্চারণ করতে পারেননি কিংবা সবরমতী আশ্রমে গিয়ে মহাত্মা গান্ধির উল্লেখ করেননি। বিদেশির হাতে দেশের সেই অসম্মানের জন্যও বিজেপিকেই দায়ী করেন মমতা।