মমতার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে মুম্বইয়ে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভ, শঙ্কিত বিজেপি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. (Photo: IANS)

বাংলায় গেরুয়া ভোট প্রায় নিশ্চিহ্ন করে জাতীয় স্তরে আরও একবার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বার্তায় বিজেপি’র শঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই উদীপ্ত সর্বভারতীয় স্তরের বিজেপি-বিরোধী শিবির।

তৃণমূল সুপ্রিমোকে সামনে রেখেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করতে চাইছেন দেশের অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপি-বিরোধী দলগুলির প্রধানদের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন বিজেপিকে দিল্লি থেকে উৎখাত করতে এখনই জোটবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।


দরকার, দলগুলির শীর্ষস্তরের নেতাদের মুখোমুখি বৈঠক। সেই বৈঠকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হোক।

পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমো এ কথাও বলেছেন, বিরোধী জোটের নেতৃত্বে কে বা কারা থাকবেন, তা পরবর্তী সময়ে স্থির হবে, এখন প্রয়োজন বিজেপি বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ একটি প্ল্যাটফর্ম সামনে আনা।

এই প্ল্যাটফর্মকে দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। মমতা’র এই জরুরি আহ্বানের অবশেষে ফল মিলেছে।

সূত্রের খবর আর কয়েকদিনের মধ্যেই মুম্বইতে হতে চলেছে দেশের অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ এক সম্মেলন। এই সম্মেলন মঞ্চ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে বিজেপি-বিরোধী মহাজোট।

শিবসেনার প্রধান মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত রবিবার এই ঘোষণা করে জানিয়েছেন, এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা মহারাষ্ট্রের শিবসেনা-এনসিপি কংগ্রেস জোট সরকার। রাউথের এই ঘোষনায় নিশ্চিতভাবেই চোখ কপালে উঠেছে বিজেপির।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢুকে সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়ে শিবসেনা যে এত দ্রুত ময়দানে নেমে পড়বে, তা কেন্দ্রীয় বিজেপির ভাবনার বাইরে ছিল।

সদ্য শেষ হওয়া উপনির্বাচনে একটি আসও না মেলায় যথেষ্টই চিন্তিত মোদি-শাহ।

সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই বিজেপি-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের জাতীয় কনক্লেভের খবরে কার্যত দিশাহারা বিজেপি।

শিবসেনা মনে করছে, শনিবারই পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে লোকসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে জোট বাঁধার এটাই আদর্শ সময়।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেনসেই চিঠিতেই তিনি এ ধরনের কনক্লেভের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেও এ ধরনের বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বুঝিয়েছিলেন।

মমতা স্ট্যালিনকে বলেছিলেন, তিনি ইচ্ছা করলে চেন্নাইতেই এই ধরনের কনক্লেভের ব্যবস্থা করতে পারেন। চেন্নাই যেতে মমতার যে কোনও আপত্তি নেই, সে কথাও বলেছিলেন।

এরই মাঝে শনিবার সোনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি-সহ জন বিরোধী নেতা দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখেন।

ওই খোলা চিঠিতে শীর্ষ বিরোধী নেতা-নেত্রীরা কেন্দ্রের অপশাসন এবং বিজেপির মদতে দেশজুড়ে হিংসাবৃদ্ধির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আর তার পরেই শিবসেনা অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের জাতীয় কনক্লেভের এই ঘোষনা করায়, তা নিশ্চিতভাবেই গেরুয়া শিবিরের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউথ জানিয়েছেন, মুম্বইতে অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন হবে। এ ব্যাপারে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

মমতার প্রস্তাব নিয়ে শিবসেনা সুপ্রিম তথা মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে কথা হয়েছে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে শরদ পাওয়ার বা উদ্ধব ঠাকরের মতো শীর্ষস্তরের বিজেপি-বিরোধী নেতারা যে এই ভাবে সাড়া দেবেন, তা কল্পনাও করেনি বিজেপি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বিজেপি-বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হয়ে উঠছেন, তাতেও যথেষ্ট শঙ্কিত বিজেপি।