২০২৬-এ বিজেপিকে হারাতে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিলেন মমতা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রত্যাশা মতোই একুশে জুলাই শহিদ স্মরণের মঞ্চ থেকে বাঙালির আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৭ জুলাই থেকে রাজ্যে ভাষা আন্দোলন শুরুর ডাক দিয়েছেন তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, এবার জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে। দেশজুড়ে বাঙালিদের উপর অত্যাচার সহ্য করা হবে না। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস মানব না’। এদিনের মঞ্চ থেকেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপিকে দিয়েছেন হুঁশিয়ারি।

একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্য রাখেন মমতা। বক্তব্যের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একেবারে রণংদেহী মেজাজে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর বক্তব্যে বেশিরভাগ সময়ই তিনি বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। পাশাপাশি নিজের ভাষাকে রক্ষা করার বার্তাও দিয়েছেন। এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তুলোধনা করেছেন মমতা। বক্তব্যের মাঝেই কোচবিহারের উত্তম ব্রজবাসীকে মঞ্চে ডেকে নেন তিনি। সম্প্রতি উত্তমকে এনআরসি নোটিশ পাঠিয়েছিল অসমের ফরেন ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে এর আগেও সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁকে ডেকে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপিকে।
দেশজুড়ে বাঙালিদের হেনস্থা, তাঁদের উপর আক্রমণের বিরোধিতা করে গর্জে ওঠেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার উপর বিরাট সন্ত্রাস চলছে। বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না। কে মাছ খাবে, কে মাংস খাবে, কে ডিম খাবে, সব ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলায় এসব মানা হবে না। রাজ্যে সব মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হবে। বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ রুখতে আগামী ২৭ জুলাই নানুর দিবস থেকে প্রতি শনি ও রবিবার মিটিং-মিছিল করার জন্য নেতা কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন মমতা। আগামী নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত এই আন্দোলন চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সকলকে ভাষা রক্ষার শপথ নেওয়ার ডাক দিয়েছেন।


মমতা আগেই জানিয়েছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে একটি নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্র। ফের একবার একুশের মঞ্চে এই নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের পাঠানো নির্দেশিকার কপি দেখিয়ে তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা বিরোধী সার্কুলার পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সার্কুলারে বলা আছে, সন্দেহ হলেই বাংলা ভাষায় কথা বলা কোনও মানুষকে ১ মাসের জন্য আটকে রাখা যাবে। এক হাজারের বেশি মানুষকে মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, রাজস্থানের জেলে ভরা হয়েছে। মমতার হুঁশিয়ারি, বাংলার বাইরে বাংলা বলার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে এই লড়াই দিল্লিতে হবে। বাঙালিদের উপর আক্রমণ হলে দিল্লিতে আন্দোলন হবে। কোনও জেল ও ডিটেনশন ক্যাম্পকে যে তিনি ভয় পান না তা ফের একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।

একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। মমতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও তাঁর সরকার মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে। আবাস প্রকল্পে গরিবদের বাড়ি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মস্থানের উন্নতিকল্পে কাজ করেছে তৃণমূল সরকার। রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।

ইডি–সিবিআইকে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে শেষ করার যে পরিকল্পনা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার করেছে তা কখনই সফল হবে না বলে মন্তব্য করেন মমতা। এই ইস্যুতে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে মমতার দাবি, ড্যামেজ ম্যানেজ করা যায় না। জেলে কতজনের জায়গা হবে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিলেন মমতা। ২০২৫ সালের একুশের মঞ্চ থেকেও সেই কমিশনের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করলেন মমতা। তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিচ্ছে তা সুপার এমারজেন্সির শামিল। বিহারে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ইস্যুতেও সরব হন তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, বাংলার একজনের নাও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়লে আন্দোলন হবে। দরকারে দিল্লিরাজের পতন ঘটাতে হবে। দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন হবে। নির্বাচন কমিশন ঘেরাও হবে।

বাংলায় থেকে তাঁর পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া তাঁর বিরুদ্ধে নেতিবাচক ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে বলেও সুর চড়িয়েছেন মমতা। ২০২৬ সালে আরও বেশি আসনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন তিনি। উত্তরে ৪০টি আসনের লক্ষ্য পূরণের টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাটি। শহিদের রক্তে তর্পণ করে বলছি, যতদিন দিল্লি থেকে উৎখাত না কর‍তে পারছি, ততদিন শান্ত হব না।’