• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

বাংলার শহিদ দুই জওয়ানের প্রতি শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর, পাশে থাকার বার্তা

সেনাবাহিনীর অভিযানে গিয়ে তুষারঝড়ের মধ্যে আটকে শহিদ হন বাংলার দুই জওয়ান পলাশ ঘোষ এবং সুজয় ঘোষ

অনন্তনাগে শহিদ হয়েছেন বাংলার দুই জওয়ান। সেনাবাহিনীর অভিযানে গিয়ে তুষারঝড়ের মধ্যে আটকে শহিদ হন বাংলার পলাশ ঘোষ এবং সুজয় ঘোষ। ৩৮ বছরের পলাশ ঘোষের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। অন্যজন বীরভূমের বাসিন্দা, বয়স ২৮ বছর। দুই জওয়ানের শহিদে শোকপ্রকাশ করে তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে পাশে থাকার বার্তাও দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এই শোকের সময়ে আমাদের সরকার দুই পরিবারকেই সম্ভাব্য সকল সহায়তা করবে।’

বুধবার কাশ্মীরের দক্ষিণ অনন্তনাগের গাদুলে জঙ্গি নিকেশ অপারেশন চালায় সেনাবাহিনী। সেই অভিযান দলে ছিলেন বাংলার দুই প্যারা কমান্ডো। ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ। অভিযানের সময় তুষারঝড়ের মধ্যে আটকে পড়েন বাংলার দুই জওয়ান। নিখোঁজ হয়ে যান পলাশ ও সুজয়। দুই প্যারা কমান্ডোর খোঁজে তল্লাশি চালাতে থাকে সেনাবাহিনী। বরফাবৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পলাশকে। আইসিইউতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। পরে উদ্ধার করা হয় সুজয়ের দেহ।

Advertisement

এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রতিকূল আবহাওয়া ও তুষারধসে আমাদের বাংলার দুই সাহসী প্যারা-কমান্ডোর শহিদ হওয়ার ঘটনায় আমি শোকাহত। বীরভূমের ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ এবং মুর্শিদাবাদের ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষকে দেশরক্ষায় তাঁদের অসীম বীরত্ব, নিষ্ঠা এবং আত্মত্যাগের জন্য আমার স্যালুট জানাই। তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এই শোকের সময়ে আমাদের সরকার দুই পরিবারকেই সম্ভাব্য সকল সহায়তা করবে।’

Advertisement

পলাশ ঘোষের মৃত্যু সংবাদ গ্রামে পৌঁছাতেই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, স্ত্রী, আত্মীয় পরিজন এবং প্রতিবেশীরা। ৪ ও ৮ বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে পলাশের। শহিদ পলাশের দেহ কখন গ্রামে এসে পৌঁছোবে, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা গ্রামের মানুষ। ২০০৯ সালে সেনাবাহিনীর চাকরিতে চাকরিতে যোগ দেন পলাশ। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন তিনি। এমনকী সিঁদুর অপারেশন চলার সময় তিনি কাশ্মীরেই ছিলেন। ৬ এবং ৭ অক্টোবর জঙ্গি দমন অভিযানে তিনি শামিল হন।

এদিকে পলাশের মা আদরি ঘোষ ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবার মুখে শুনছি, ছেলে বরফের ধসে মারা গিয়েছে। অপারেশনে গিয়েছিল ছেলে। ৪৫ দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। পনেরো দিন আগে ফের জম্মুতে ফিরে গিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিল। দুর্গা পুজোর আগেই ছেলেকে চলে যেতে হয়েছিল। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, কী করে বলব। ছেলেকে শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।‘

পলাশের বাবা প্রশান্ত ঘোষ জানান, ‘২৮ সেপ্টেম্বর হেড কোয়ার্টারে কাজে যোগ দেওয়ার পরে আমার সঙ্গে শেষ বারের মতো ফোনে কথা হয়েছিল ছেলের। লোক মুখে শুনছি, জঙ্গি দমনে গিয়ে তুষার পাতে আমার ছেলে দেশের জন্য শহিদ হয়েছে। এটা আমার কাছে খুব গর্বের বিষয়। দেশের জন্য ছেলে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। বাবা হিসেবে ছেলের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে হবে। এছাড়া তো কিছু করার নেই। তবে আমি আবারও বলছি, দেশ রক্ষার কাজে গিয়ে ছেলে শহিদ হয়েছে, এটা আমার কাছে গর্বের বিষয় ছাড়া অন্য কিছু নয়।‘

অন্যদিকে শনিবার বিকেল ৪টে ৩৫ মিনিট নাগাদ সুজয় ঘোষের দেহ গ্রামে এসে পৌঁছোয়। কফিনবন্দি দেহ বীরভূমের রাজনগর থানার কুন্ডিরা গ্রামে আনা হয়।  নিহত জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের জেলা শাসক বিধান রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা প্রমুখ। গান স্যালুট দিয়ে বীর জওয়ানকে শেষ বিদায় জানানো হয়।

সুজয় ঘোষের বাবা পেশায় কৃষক। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এই জওয়ান। গত এক বছর ধরে কাশ্মীরে পোস্টিং ছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার বরফের ভিতর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর শনিবার বীরভূমের গ্রামে ফিরিয়ে আনা হল দেহ। গ্রামের বীর ছেলের মৃত্যুতে শোকাস্তব্ধ গ্রামবাসীরা।

 

Advertisement