ডিভিসিকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী

প্রতীকী ছবি (Photo:SNS)

এক ভারী বৃষ্টিতে বেশ কিছু নদী ফুসছে। এর মধ্যে মাইথন, পাঞ্চেত, ডিভিসি জল ছাড়ায় বিভিন্ন নদীর জলতল ফুলে ফেঁপে উঠেছে। নদীবাঁধ ভেঙে বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে।

এই অবস্থায় আজ শনিবার আকাশ পরিষ্কার থাকলে আকাশপথে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, কপ্টারে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন তিনি।

এই প্লাবনের জন্য শুক্রবারই ডিভিসি’কে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কথায় এটি ম্যান মেড বন্যা। বহুবার ডিভিসি’র সঙ্গে কথা বলেও কোনও লাভ হয়নি। মাঝ রাতে আমাদের না জানিয়েই জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পাপ, অপরাধ।


আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আগে থেকে জানলে আমরা মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের ছেড়ে দেওয়া জলের জন্য আমাদের সমস্যা হচ্ছে। এর দায় আমরা কেন নেব? প্লাবিতদের সাহায্যের জন্য আর্জি জানিয়েছেন মমতা।

বানভাসি এলাকার মানুষের কাছে। প্রশাসনের সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। একটানা বৃষ্টিতে ডিভিসি জলাধারে জলের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। শুক্রবার সকালেই মাইথন জলাধার থেকে ৮০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ৫৫ হাজার কিউসেকেরও বেশি জল ছাড়া হয়েছে।

দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে দেড় লক্ষ কিউসেকেরও বেশি জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসি’র জল ছাড়ার পরে অজয় নদীতে জল বেড়ে গিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বাঁধ ভেঙে জল গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত জলমগ্ন কুড়ি থেকে তিরিশটি গ্রাম। কয়েকশাে বিঘে চাষের জমি এই মুহূর্তে জলের তলায়।

বানভাসি হওয়ার সম্ভাবনা হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং বাঁকুড়া দক্ষিণবঙ্গের এই পাঁচ জেলার। গত জুলাই-আগস্ট মাসেই জলাধার থেকে জল ছাড়ায় হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরসহ একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল একাধিক নদীবাঁধ।

তখনও মুখ্যমন্ত্রী ন্যা কবলিত অঞ্চলে গিয়ে ডিভিসি’র সমালােচনা করেছিলেন। একটানা বৃষ্টি এবং ডিভিসির থেকে জল ছাড়ার জন্য রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বীরভূমের নানুর, ইলামবাজারে প্লাবন পরিস্থিতি অবনতি হয়েছিল আগেই।

শুক্রবার সকালে নানুরের গুপসরা পঞ্চায়েতের সুন্দরপুর গ্রামের কাছে অজয় নদের বাঁধ ভেঙে যায়। অন্যদিকে মুকুটমণিপুরের জলাধার থেকে উপচে আসে কংসাবতীর জল। এই মুহূর্তে পশ্চিম মেদেনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোণাসহ একাধিক মহকুমায় পুরােপুরি বন্যা পরিস্থিতি।

একই অবস্থা হুগলির ফুসছে গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর নদী। দ্বারকেশ্বরের জলে হুগলির আরামবাগ, গােঘাটসহ একাধিক জলমগ্ন। পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্ধারকাজে নামানাে হচ্ছে সেনাবাহিনী। চলতি বছরে বর্ষায় দু’বার বন্যার কবলে পড়তে হল বাংলাকে। রাজ্যে প্রায় ২২ লক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত।

প্রায় এক লক্ষ বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার এই তথ্য দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ দ্বিবেদী। তিনি জানান, বন্যা মােকাবিলায় পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া জেলায় সেনা নামানাে হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই দুই সচিব বিজয় ভারতীকে বীরভূম, রাজেশ পাণ্ডেকে পশ্চিম বর্ধমানে পাঠানাের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরেই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ডিভিসি’র ওপর দায় চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার সঙ্গে সহমত হয়ে বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই যুক্তিকেই পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন মুখ্যসচিব।

এদিন মুখ্যসচিব বলেন, মাইথন ব্যারেজ থেকে বৃহস্পতিবার ৪৯ কিউসেক জল ছাড়া হয় বেলা বারােটায়। এক ঘন্টা কাটতে না কাটতে বেলা একটায় ফের ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। তারপর ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে মাইথন।

শুক্রবার সকাল সওয়া আটটা থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ধারাবাহিকভাবে ছাড়া হচ্ছে। নবান্নের তরফে বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত আরামবাগে দু’টো, খানাকুল এক এবং দুই নম্বর ব্লকে দু’টি বাঁধ বেঁধেছে। বাঁকুড়ার বড়জোড়া, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর বীরভূমের নানুর ব্লকে বাঁধ ভেঙেছে একটি করে।

বৃহস্পতিবার ভাের তিনটেয় ঝাড়খণ্ডের শিকাতিয়া ব্যারাজ থেকে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। শুক্রবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ ফের ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ঝাড়খণ্ড। আসানসােল, বারাবনি, রাণীগঞ্জে সেনা নামানাের মতাে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিন কলাম সেনাবাহিনী পানাগড় থেকে আসানসােলে পাঠানাে হয়েছে।

পশ্চিম বর্ধমান ও হুগলিতে তিন কলাম করে এবং হাওড়াতে দুই কলাম সেনাবাহিনী নামানাে হয়েছে। পঁচিশটি এনডিআরএফ টিম মােতায়েন করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। মুখ্যসচিব জানিয়ছে, উদ্ধারকাজ, ত্রাণ বন্টন ইত্যাদি খতিয়ে দেখতে আইএএস অফিসার ও মন্ত্রীদের জেলা ভাগ করে দায়িত্ব দিচ্ছে নবান্ন।