এসআইআর নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা, আদালতের নজরদারিতে এসআইআর করার আবেদন

ফাইল চিত্র

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের। শুক্রবার হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন পিন্টু সরকার। এসআইআরের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন মামলাকারী। রাজ্যে এসআইআর সংক্রান্ত কাজ শুরু হয়ে গেছে। আগামী ৪ নভেম্বর থেকে বাড়ি বাড়ি এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে যাবেন বিএলও-রা। তার আগেই এসআইআর নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল। মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ।

এসআইআর-এর প্রয়োজনীয়তা-সহ একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছন মামলাকারী। আদালতের নজরদারিতে বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার দাবি তুলেছেন তিনি। একইসঙ্গে এসআইআর-এর সময়সীমা বাড়ানোরও কথা বলা হয়েছে। এসআইআর কেন হচ্ছে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন করেছেন মামলাকারী। বিস্তারিত ভাবে আদালতের কাছে তা জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০২ সালের সম্পূর্ণ ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন মামলাকারী পিন্টু সরকার।

গত সোমবার বাংলায় এসআইআর ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। তৃণমূলের দাবি, ভোটে ফায়দা তুলতে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ছাব্বিশের আগে এসআইআর। আর এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে এসআইআর নিয়ে মামলা দায়েরের অনুমতি চান মামলাকারীর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তাতেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল জানান, অনুমতির কোন প্রয়োজন নেই, মামলা দায়ের হলে শুনানি হবে।


আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিতরণ করবেন বিএলও-রা। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে  ভোটারদের নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ এবং ফর্ম ফিল-আপ করার কাজ। ৯ ডিসেম্বর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযোগ জমা নেওয়া হবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন ধাপে অভিযোগ সংক্রান্ত শুনানি হবে।

যাঁরা ফর্ম ফিল-আপ করতে পারবেন না  বা যাঁদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যাবে না অথবা অন্য কোনও কারণে যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম ফিল-আপ করতে পারবেন না, তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইআরও ও এইআরওর নেতৃত্বে শুনানি সম্পন্ন হবে। প্রথমে জেলা শাসকের কাছে এবং পরের ধাপে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে আবেদন করা যাবে।

খসড়া তালিকায় নাম ওঠার পর ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে ব্যক্তির নাম বা তাঁর পরিবারের সদস্যর সম্পর্ক ‘ম্যাচিং’ করা হবে। যাদের ‘ম্যাচিং’ হয়ে যাবে তাঁদের কোনও নোটিস দেওয়া হবে না। তাঁদের কাছ থেকে কোনও  নথিও চাওয়া হবে না। তবে যাঁদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকবে না, তাঁদের নোটিস দেওয়া হবে। উপযুক্ত নথি দেখতে চাইবেন নির্বাচনী আধিকারিকরা। ৭ ফেব্রুয়ারী চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ইতিমধ্যেই বিশেষ নিবিড় সংশোধন ঘোষণার পরেই আত্মঘাতী হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ কর। সুইসাউড নোটে এনআরসিকে দায়ী করেছেন তিনি। বীরভূমের ইলামবাজারে এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন ৯৫ বছরের ক্ষিতীশ মজুমদার। এছাড়া ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় এসআইআর-এ নাম বাদ যাওয়ার আতঙ্কে বিষ খেযেছেন দিনহাটার বাসিন্দা খায়রুল শেখ।

উল্লেখ্য  বিহারের শেষ হয়েছে এসআইআর প্রক্রিয়া। ৬ এবং ৯ নভেম্বর দুই দফায় সেখানে ভোট হবে। কমিশনের তথ্য অনুসারের এসআইআর-এর পর বিহারের তালিকা থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটার বাদ পড়েছে। সে কারণে রাজ্যে এসআইআর-এর বিরোধিতায় সরব শাসক দল তৃণমূল। এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে জোড়াফুল। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও হচ্ছে বলে সরব হয়েছে শাসক দল। অন্য দিকে, এসআইআর-এর মাধ্যমে মৃত ভোটার এবং অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ দেওয়া হবে বলে দাবি করেছে বিজেপি। কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যাবে না বলেও আশ্বস্ত করেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, অভিযোগ  পদ্ম শিবিরের।