সরকারি অনুদানের টাকায় দুর্গাপুজো হলেও খরচের নির্দিষ্ট হিসাব জমা না দিলে আর কোনওভাবেই মিলবে না সেই অনুদান। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, যে সব পুজো কমিটি ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দেয়নি, তাদের অনুদান বন্ধ করে দিতে হবে।
বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে জানায়, ‘পুজো কমিটিগুলিকে এর আগেও খরচের হিসাব দিতে বলা হয়েছিল। যারা তা দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’ রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতকে জানান, ২০২৩ সালে মার্চ মাসে আদালতকে জানানো হয়, ৫০০-রও বেশি পুজো কমিটিকে অনুদান দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি কমিটি এখনও পর্যন্ত ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দেয়নি।
Advertisement
তবে বিচারপতিদের বক্তব্য, তারা পরিসংখ্যান জানতে চায় না, জানতে চায় পদক্ষেপের কথা। বিচারপতি পালের স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ, ‘যারা হিসাব দেয়নি, তাদের টাকা দেওয়া বন্ধ করুন।’ সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আগামী বুধবার এই বিষয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
Advertisement
দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন সমাজকর্মী সৌরভ দত্ত। তাঁর অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বহু পুজো কমিটি কোনও খরচের হিসাব দেয়নি। বরং প্রতিবছর অনুদানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। মামলাকারীর আইনজীবীদের বক্তব্য, জনতার টাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে অনুদান বিলি করছে সরকার, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরোধী।
প্রতিরক্ষা হিসেবে রাজ্য সরকারের দাবি, এই অনুদান জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন – ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি এবং অতিমারির সময় সচেতনতা বৃদ্ধিতে খরচ হয়েছে এই টাকা। যদিও সেই খরচের যথাযথ হিসাব কোথায় জমা পড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত।
আদালতে রাজ্যের পক্ষ থেকে মামলার শুনানি পুজোর পরে করতে চাওয়া হলে তা খারিজ করে দেন বিচারপতি পাল। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘পুজোর পরে শুনানি করলে মামলার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। আগে হলফনামা দিন, তারপর শুনানি হোক।’
আগামী বুধবার মামলার পরবর্তী শুনানিতে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ ও অবস্থান স্পষ্ট হবে। তবে তার আগেই আদালতের বার্তা স্পষ্ট – হিসাব না দিলে মিলবে না সরকারি অনুদান।
Advertisement



