রাজ্যে নার্সিং পড়ার আগ্রহ বাড়ছে দ্রুত। কিন্তু সেই আগ্রহকে পুঁজি করে বেআইনি ভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক নার্সিং কলেজ। অনেক ক্ষেত্রে না আছে পরিকাঠামো, না আছে পর্যাপ্ত শিক্ষক। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে রীতিমতো ছিনিমিনি। এ বার সেই অনিয়মে রাশ টানতে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু রাজ্যের সব নার্সিং কলেজের পূর্ণাঙ্গ অডিটের নির্দেশ দিয়েছেন। কত কলেজ রয়েছে, সেখানে কত জন পড়ুয়া পড়ছেন, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে— সব কিছুর বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজ্য নার্সিং কাউন্সিলকে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেই অডিট শেষ করে আদালতে রিপোর্ট দিতে হবে।
আদালত জানিয়ে দিয়েছে, অডিটের সময় যদি কোনও কলেজে বেআইনি কাজ বা আর্থিক গরমিল ধরা পড়ে, তা হলে কাউন্সিল সরাসরি এফআইআর করতে পারবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কলেজের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পথও খোলা থাকবে।
শুনানির সময় বিচারপতির মন্তব্য ছিল কড়া। তাঁর কথায়, রাজ্যজুড়ে কত নার্সিং কলেজ খোলা ও বন্ধ হচ্ছে, তার কোনও সঠিক নজরদারি নেই। কাজের আশায় পড়ুয়ারা লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসা না চললেই মালিকেরা কলেজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। মাঝপথে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউই দায় নিচ্ছে না।
এই মামলার সূত্রপাত দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার একটি নার্সিং কলেজ ঘিরে। ওই কলেজের দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন, প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানায় কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ ভর্তি হতে তাঁরা প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। নার্সিং কাউন্সিল ব্যবস্থা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা হাইকোর্টে মামলা করেন।
আদালত কলেজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ন’জন ট্রাস্টিকে হাজিরার নির্দেশ দেয়। ট্রাস্টিরা জানান, পড়ুয়ার অভাবে কলেজ চালানো যাচ্ছে না। তবে বিচারপতির স্পষ্ট বক্তব্য, এই যুক্তিতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা যাবে না। শেষে প্রতিটি ট্রাস্টিকে এক লক্ষ টাকা করে কাউন্সিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে দুই ছাত্রীকে অন্য নার্সিং কলেজে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হবে।