যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশে অনীহা হাইকোর্টের, হতাশ প্রার্থীরা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি খুইয়ে আজও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে থাকা বহু যোগ্য প্রার্থী বুধবার ফের আশাহত হলেন। চাকরি বাতিল হওয়া সমস্ত যোগ্য প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের আর্জিতে সাড়া দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলাটি উঠতেই আবেদনকারীরা জানান, এতদিন আদালত বারবার অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিলেও চাকরি হারানো যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তাঁদের দাবি, এই তালিকাই নতুন নিয়োগে স্বচ্ছতার পথ দেখাতে পারে। কিন্তু আদালত সেই আর্জিতে সাড়া দিল না। কোনও নির্দেশ জারি করলেন না বিচারপতি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩ এপ্রিল এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের সমগ্র প্যানেল বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, নতুন নিয়োগে কোনও অযোগ্য প্রার্থী যাতে ঢুকতে না পারে, তা স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। এরপর থেকেই হাইকোর্টে বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়ে মামলা উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, যোগ্য হয়েও বহু প্রার্থী চাকরি হারিয়েছেন, অথচ তাঁদের পরিচয় বা তালিকা আজও সামনে আসেনি।

জানা গিয়েছে, নবম-দশম শ্রেণির নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রার্থী এদিন আদালতে জানান, ‘টেন্টেড’ বা দাগিদের আলাদা ক্যাটেগরি দেখিয়ে তালিকা প্রকাশ করা হলেও, যাঁরা অযোগ্য নন তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’— দুই তালিকাই একসঙ্গে প্রকাশ পেলে প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ হবে। পাশাপাশি এসএসসি যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে কারা প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে চাকরি পেয়েছিলেন, সেই তথ্যও নেই বলে অভিযোগ।


এসএসসি-র পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান, ‘টেন্টেড’ বা অযোগ্যদের তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘যাঁরা যোগ্য, তাঁরা এখনও চাকরি করছেন। প্রতিদিন নানারকম দাবি নিয়ে কেউ না কেউ আদালতে আসছেন। কিন্তু সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। আমাদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ শেষ করতে হবে। চাপের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখন নতুন কোনও নির্দেশ পেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। যদি কোনও অযোগ্য প্রার্থী নতুন নিয়োগে ঢুকে পড়েন এবং তা প্রমাণিত হয়, তবে তাঁকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, যাঁরা এখনও বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন এবং ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রয়েছেন, তাঁরা সকলেই ‘যোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। তৃণমূল সাংসদ ও সিনিয়র আইনজীবীও একই দাবি করে বলেন, যোগ্যদের তালিকা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, আবেদনকারীদের যুক্তি, যাঁরা প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সুপ্রিম কোর্ট ‘অযোগ্য’ বলেনি। কারণ তাঁরা দুর্নীতি করে চাকরি পাননি। প্যানেল শেষ হওয়ার পর এসএসসি তাঁদের নিয়োগ করেছিল। তাই কেন সেই তালিকা আলাদা ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন আদালতের সামনে তোলেন আবেদনকারীরা।

বিচারপতি অমৃতা সিনহা উভয় পক্ষের সব বক্তব্য শোনার পরেও এই পর্যায়ে নতুন করে কোনও নির্দেশ দিলেন না। ফলে যোগ্য হয়েও চাকরি হারানো প্রার্থীদের উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা আরও কিছুদিন জারি থাকল।