পুলিশের গুলিতে বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ, রণক্ষেত্র গুড়াপ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র (Photo: IANS)

জয় শ্রীরাম বলা নিয়ে তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে এক বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ায় বুধবার রাত থেকে উত্তপ্ত হুগলির ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্রের গুড়াপ থানার অন্তর্গত বাথানগড়িয়ার আসপাড়া ও সাতুরিয়ার বিভিন্ন এলাকা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধনেখালির ফিডার রােড সহ বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেলের টায়ার জ্বালিয়ে অবরােধ করার পাশাপাশি গুড়াপ থানা ও পুলিশকে লক্ষ করে ইট বষ্টি করে বিজেপি সমর্থকেরা। ভাঙচুর চালানাে হয় পুলিশের কয়েকটি গাড়িতে। অবশেষে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

হুগলি গ্রামীন পুলিশের সুপার সুখেন্দু হীরা পুলিশের গুলি চালানাের কথা স্বীকার করেছেন। দোষী পুলিশ অফিসারের গ্রেফতারের দাবিও তােলে বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা।


জানা গেছে, বুধবার গুড়াপের বাথানগড়িয়ার আসপাড়ায় বিজেপি কর্মীরা বিজয় মিছিল করে। মিছিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ স্থানীয় তৃণমূল নেতা আশ্রিত দুষ্কৃতী বাহিনী সাধন বাউল দাস নামে এক বিজেপি কর্মীকে জয় শ্রীরাম বলার জন্য বেধড়ক মারধর করার পাশাপাশি প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে টাঙ্গি দিয়ে এলােপাথাড়ি কোপ মারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা ও বিজেপি কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ধনেখালি গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সাধনের মাথায় সতেরােটি সেলাই পড়ে। এরপর অবস্থায় অবনতি হওয়ায় তাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

খবর পেয়ে গুড়াপ থানার মেজবাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ কর্মী বাথানবেড়িয়ার আসপাড়ায় ঢােকার আগে সাতুরিয়া এলাকায় বিজেপির শুভেন্দু মালিক ওরফে ছােটুর সাথে রাস্তা থেকে মােটর বাইক সরানাে নিয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। আর তখন ছােটুকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জখন হন বিজেপি কর্মী জয়চাঁদ মালিক।

সম্পর্কে ছােটুর মামা জয়চাঁদের বুকে গুলি লাগে। এরপরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রকাশ রাস্তায় বাইক নিয়ে ছােটু দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় হঠাৎই পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে ছােটুর বাইক রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মারধর করতে শুরু করে।

জয়চাঁদ ছােটুকে পুলিশ কর্মীদের হাত থেকে ছাড়ানাের চেষ্টা করেন এবং মারধরের কারণ জানতে চান আর ঠিক তখনই গুড়াপ থানার মেজবাবুর নির্দেশে এক পুলিশ কর্মী গুলি চালালে তা গিয়ে জয়র্চাদের বুকে লাগে। গুলিবিদ্ধ জয়চাঁদকে গুরুতর জখম অবস্থায় ধনেখালি গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেখান থেকে তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় এদিন দুপুরের দিকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার রাতেই ক্ষিপ্ত জনতা ও বিজেপি কর্মীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। কোনওরকমে তিন পুলিশ কর্মী প্রাণ বাঁচিয়ে একটি ঘরে আশ্রয় নেন। এরপর গুড়াপ থানার বড়বাবুর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে ওই তিন পুলিশ কর্মীকে উদ্ধার করে আনে।

এই ঘটনা জানাজানি হতেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিজেপি কর্মীরা ধনেখালির ফিডার রােড সহ বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেলের টায়ার জ্বালিয়ে অবরােধ করে। অন্যদিকে বিজেপি কর্মীরা গুড়াপ থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখানাের পাশাপাশি পুলিশ ও থানা লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করতে থাকে। এতে পুলিশের আরও একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরে বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। হুগলি গ্রামীন পুলিশের সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, এক বিজেপি কর্মীকে মারধর করার তদন্তে যাওয়ার সময় রাত সাড়ে এগারােটা নাগাদ সাতুরিয়া গ্রামে পুলিশ রাস্তায় থাকা একটি বাইক সরাতে গেলে গ্রামবাসীদের সাথে বচসা থেকে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।

এই ধস্তাধস্তির সময়ই এক পুলিশ কর্মীর বন্দুক থেকে গুলি ছুটে জয়চাঁদ মালিক নামে এক গ্রামবাসীর বুক ছুঁয়ে চলে যায়। এরপরই গ্রামবাসীরা সেখানে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।

তিনি বলেন, এদিন বিজেপির তরফে গুড়াপ থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তার আগে বিজেপি কর্মীরা থানা লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করলে আরও একটি গাড়ি ভেঙে যায়। পরে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

অপরদিকে এদিন চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে আহত জয়চাঁদ মালিক ও সাধন বাউল দাসকে দেখতে যান বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগ সহ অন্যান্যরা। সুবীরবাবু বলেন , বর্তমানে তৃণমূলের কোনও নেতা বা কর্মী রাস্তায় নামার সাহস দেখাচ্ছে না। তাই পুলিশকে দিয়ে গুলি চালিয়ে বিজেপিকে আটকানাের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সুবীরবাবুর দাবি আসলে তৃণমূল নেতৃত্ব এদিন পুলিশকে দিয়ে ধনেখালির মন্ডল সভাপতি স্বপন সাঁতরাকে মারার চক্রান্ত করছিল। কিন্তু জয়চাঁদ মালিকের গায়ে সেই গুলি লেগে যাওয়ায় তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সুবীরবাবু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে আর প্রশাসন নিজেদের কাজ না করলে আগামী দিনে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সমস্ত সরকারি কাজ স্তব্ধ করে দেবেন।  ধনেখালির বিধায়ক তথা মন্ত্রী অসীমা পাত্র বলেন এটা একটা পারিবারিক বিবাদের ঘটনা। এর সাথে তৃণমূলের কোনও যােগ নেই। লােকসভা ভােটের ফল ঘােষণার পর থেকে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের তান্ডবের জেরে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী ঘরছাড়া।