বনধ ঘিরে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র বারাকপুর

সােমবার সকাল হতেই বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমে পড়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। সকাল থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা।

Written by SNS Barrackpore | September 3, 2019 1:26 pm

প্রতীকী ছবি (Photo: Indrajit Roy/IANS)

বিক্ষোভ, রেল থেকে পথ অবরােধ, দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জ কোনও কিছুই বাদ গেল না অর্জুনের ওপরে হামলার ঘটনায় বারাকপুর জুড়ে বিজেপির ডাকা বন্ধকে কেন্দ্র করে। যার জেরে ফের একবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠল বারাকপুর শিল্পাঞ্চল ও সন্নিবিষ্ট অঞ্চল। সােমবার সকাল হতেই বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমে পড়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।

সকাল থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। জোর করে পথ-অবরােধ, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযােগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। তা রােধেই তৃণমূল কর্মীরা পথে নামলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দু’দলের সমর্থকরা। অবরােধের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, ঘােষপাড়া রােড, ফেরি চলাচল এমনকি ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

প্রসঙ্গত, রবিবার শ্যামনগরে ফিডার রােডে পার্টি অফিস দখল ও সাংসদ অর্জুনের গাড়ির ওপরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বারাকপুর অঞ্চল। দিকে দিকে চলে পথ অবরােধ। সেরকমই একটি পথ অবরােধ তুলতে গেলে বিজেপি-পুলিশ সংঘর্ষ বেধে যায়। ব্যাপক ইটবৃষ্টি শুরু হয়। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরই মাঝে পড়ে মাথা ফাটে বিজেপি সাংসদের। এর প্রতিবাদেই এদিন ১২ ঘণ্টার বারাকপুর বধ ডাকে বিজেপি। তা সফল করতেই সকাল থেকে অবরােধ, বিক্ষোভ, জোর করে দোকান-বাজার বন্ধ করতে পথে নামে বিজেপি কর্মীরা। তা রােধেই পুলিশ ও তৃণমূল সক্রিয় ভূমিকা নেয়।

এদিন সকাল হতেই কাকিনাড়া আপ লাইনে ট্রেন অবরােধ করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। মিনিট কুড়ির এই ট্রেন অবরােধের ফলে শিয়ালদহ-রানাঘাট লাইনে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। দার্জিলিং মেল, পাটনা-কলকাতা এক্সপ্রেস সময়ের চেয়ে দেরিতে পৌঁছয়। পরে অবশ্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছে রেল।

এদিকে ভােরের আলাে ফুটতেই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, ঘােষপাড়া রােড় পথ অবরােধ করতে শুরু করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। টিটাগড়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে কয়রাপুর অঞ্চলে টায়ার, গাছের গুঁড়ি জ্বালিয়ে অবরােধ শুরু করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। সে খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে অবরােধ তােলে। এ খবর চাউর হতেই শ্যামনগর ঘােষপাড়া রােডে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরােধ শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।

বনধের কারণে বন্ধ থাকে কঁচরাপাড়া বারাকপুর রুটের ৮৫ নং রুটের বাস, বন্ধ থাকে বারাকপুর অঞ্চলের ফেরি চলাচল। ফলে হুগলি থেকে বারাকপুরের যাগাযােগ পুরােপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বেলা বারােটা নাগাদ নৈহাটি ফেরি ঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল চালু হয়। জোর করে অটো-টোটো বন্ধ করে দেওয়া হয় সকালের দিকে। যার কারণে সকালে কাজে বেরিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

যদিও এদিন বনধের প্রভাব পড়ে গােটা শিল্পাঞ্চলে। শিল্পাঞ্চলের ১২টি জুটমিলেই এদিন কর্মীদের দেখা পাওয়া যায়নি। রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকে মাল ভর্তি ট্রাক। তবে এদিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে টিটাগড় অঞ্চল। এদিন সকাল সাতটা থেকে টিটাগড় থানার ব্রহ্মস্থান মােড়ে বি টি রােড অবরােধ করে আধঘণ্টা বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পুলিশ এসে অবরােধ তুলে দেয়। অভিযােগ উঠেছে টিটাগড় স্টেশন সংলগ্ন বেশ কয়েকটি দোকান জোর করে বন্ধ করে দেয় বন্ধ সমর্থকরা। তা ছাড়া অটো থেকেও যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযােগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

টিটাগড় থানার বারাকপুর বারাসত রােডে বনধের সমর্থনে মিছিল করছিল বিজেপি। অভিযােগ, সুভাষ কলােনি মােড়ে তৃণমূল সমর্থকরা মিছিল আটকায়। দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এরপর সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ বনধের সমর্থনে বিজেপির মিছিল বারাকপুরের ফ্লাইওভার পেরিয়ে নীচে নামলেই, সেই মিছিলে হামলা চালায় তৃণমুল বলে অভিযােগ। আক্রান্ত বিজেপি নেতা সঞ্জয় যাদবের অভিযােগ, পুরপ্রধান উত্তম দাসের নেতৃত্বে তাদের মিছিলে হামলা চালানাে হয়েছে। ইট, রড, বাঁশ দিয়ে পেটানাে হয়েছে। কৃষ্ণ ব্যানার্জি, মীনা সিংহ রায় সহ দশজন জখম হয়েছেন।

এর কিছু পরে বেলা বারােটা নাগাদ বারাকপুর নােনাচন্দনপুকুর বাজারের কাছে বারাসত রােডের জাফরপুর মােড়ে পথ অবরােধ করে বিজেপি। অবরােধ চলাকালীন তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ডেপুটি কমিশনার অজয় ঠাকুর ও টিটাগড় থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের নেতৃত্বে র‍্যাফ ও বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠিচার্জ করে।

স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযােগ, পুরপ্রধান উত্তম দাসের নেতৃত্বে হামলা চালানাে হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন মােট ২২ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় ছ’জন বারাকপুর বি এন বােস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরও দুজন টিটাগড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনি। আক্রান্ত হয়ে বারাকপুর পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি অমল মণ্ডল বি এন বােস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওনার মাথায় ২২টি সেলাই পড়েছে।

তবে অভিযােগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বারাকপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান উত্তম দাস। তিনি বলেন, বিজেপি জোর করে ওদের দোকানপাট বন্ধ করেছে। তাদের মিছিলে বিজেপি হামলা চালিয়েছে। কিন্তু কোথাও ওরা জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করলে দলীয় কর্মীরা প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়েছে।

এদিন দুপুরে আক্রান্তদের খোঁজ-খবর নিতে আসেন প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎবরণ তােপদার। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে তড়িৎবাবু সাংবাদিকদের বলেন, দখলদারি রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার। এদিনের বনধ প্রসঙ্গে বিজেপির বারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেন, বনধে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধকে সমর্থন করেছে। তবে তৃণমূলের হামলায় ৩৫-৪০ জন দলীয় কর্মী আহত হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে ওরা হামলা চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন ১৮ জন কর্মী।

বারাকপুর পুলিশ কমশনারেটের এক আধিকারিক জানান, এদিন ৪৬ জন বন্ধ সমর্থককে আটক করা হয়েছে। আজকে কোনও পুলিশকর্মী আহত না হলেও গতকালের ঘটনায় ন’জন আহত হয়েছেন।

এদিকে এদিন আহত সাংসদ অর্জুন সিংকে দেখতে দিল্লির সফর কাটছাঁট করে বাইপাস লাগােয়া বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছন বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এছাড়া এদিন হাসপাতালে যান বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন ও মুকুল রায়। এদিন রাজ্যপাল যখন হাসপাতালে যান, সেই সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন অর্জুনপুত্র বিধায়ক পবন সিংও। অর্জুনের শারীরিক অবস্থার খোজ নেন রাজপাল। হামলার নিন্দা করেন তিনি। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বর্তমান রাজ্যপাল।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বর্তমান রাজ্যপাল। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষকদের উপর হিংসার ঘটনা দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি চাই রাজ্যে আইনের শাসন কায়েম থাকুক। বন্ধ হােক হিংসা। কিন্তু রাজ্যে যা ঘটছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। সাংসদের ওপর এই ধরনের হামলা নিন্দাজনক। রাজ্যের উচিত উন্নয়নের দিকে নজর রাখা। পাশাপাশি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানাবেন বলে জানান তিনি। তবে রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের তরফে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।