কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আসন্ন কলকাতা সফরে নেই কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচি। কিন্তু আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে অমিত শাহের এই সফরকে রাজনৈতিক কাজে লাগাতে চাইছেন দলের নেতা-কর্মীরা। তাই একেবারে নতুন কৌশল সাজিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। দল এবং বিজেপি যুব মোর্চা সূত্রের খবর, এ বার শাহের কনভয়ের সঙ্গে থাকছে বিশাল বাইক মিছিল। সেই মিছিলের মাঝখানেই এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে পৌঁছবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংগঠনের অন্দরমহলে এই পরিকল্পনাকে শক্তিপ্রদর্শন ও জনসংযোগের নতুন অস্ত্র হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের শেষ দু’দিন, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর কলকাতায় একাধিক সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা অমিত শাহের। তার আগের দিন রাতেই, অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পৌঁছতে পারেন তিনি। গত সোমবার বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল রাজ্যে এসে এই সফর ঘিরে প্রস্তুতি বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত শাহের দপ্তর থেকে চূড়ান্ত সফরসূচি রাজ্য বিজেপির হাতে এসে পৌঁছয়নি। সে কারণেই দলীয় স্তরে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি।
তবে সফর বাতিল না হলে এই বার যেভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে বিজেপি, তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আগে কখনও দেখা যায়নি বলেই দলীয় সূত্রের দাবি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলি— এই পাঁচটি এলাকার মোট ১০টি সাংগঠনিক জেলা এই বাইক মিছিলের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রত্যেকটি জেলা থেকে ৫০০টি করে বাইক নামানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে মোট সংখ্যা পাঁচ হাজার ছোঁয়ার কথা। যুব মোর্চার একাংশের দাবি, পুরো পাঁচ হাজার না হলেও চার হাজারের কাছাকাছি বাইক শাহের কনভয়ের সামনে ও পিছনে থাকবে।
বাইক মিছিল কোন দিন এবং কোন পথে হবে, তা এখনও পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি। বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চূড়ান্ত সফরসূচির উপরই সব কিছু নির্ভর করছে। তবে দুটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি ২৯ ডিসেম্বর রাতে বাইক মিছিল হয়, তা হলে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নিউটাউন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কনভয়ের সঙ্গে থাকবে বাইক মিছিল। বিমানবন্দরে শাহকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর নৈশাবাসের জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে।
আর যদি ৩০ ডিসেম্বর সকালে এই কর্মসূচি হয়, তা হলে যাত্রাপথ আরও দীর্ঘ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিউটাউন থেকে বিধাননগরের সেক্টর ফাইভ, বিজেপির রাজ্য দপ্তর পর্যন্ত বাইক মিছিলের মধ্যে দিয়েই যাবেন শাহ।
সেক্টর ফাইভ এলাকায় একটি সমস্যা অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। বিজেপি দপ্তরের আশপাশে এমনিতেই নেতা ও নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়ির ভিড় থাকে। কাছেই পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থাকায় রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। ফলে কয়েক হাজার বাইক একসঙ্গে ওই সরু গলিতে ঢোকা কার্যত অসম্ভব। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, গলির মুখ পর্যন্ত বাইক মিছিল শাহের কনভয়ের সঙ্গে থাকবে। তার পরে কনভয় দপ্তরের দিকে ঢুকে যাবে, বাইক মিছিল মূল রাস্তায় বেরিয়ে যাবে।
দলের অন্দরে এ নিয়েও মতভেদ রয়েছে। বিজেপির একাংশ চাইছে, ৩০ ডিসেম্বর সকালে দিনের আলোতেই এই কর্মসূচি হোক। তাঁদের মতে, দিনে হলে সাধারণ মানুষের নজরে পড়ার সুযোগ বেশি। অন্যদিকে, অনেকে আবার ২৯ ডিসেম্বর রাতের পক্ষপাতী। তাঁদের যুক্তি, বিমানবন্দর থেকে নিউটাউনের প্রশস্ত রাস্তায় কয়েক হাজার বাইকের হেডলাইট একসঙ্গে জ্বলে উঠলে তা অনেক বেশি নজরকাড়া দৃশ্য তৈরি করবে।
উল্লেখ্য, মোদী জমানার গত ১১ বছরে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অমিত শাহই সবচেয়ে বেশি বার পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন। কিন্তু তাঁর কনভয় ঘিরে এই ধরনের বাইক মিছিলের পরিকল্পনা আগে কখনও হয়নি। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, এ বারের সফরে শাহের কোনও প্রকাশ্য জনসভা নেই। সবই সাংগঠনিক বৈঠক। ফলে সরাসরি জনসংযোগের সুযোগ কম। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই শাহের এই সফরকে শক্তিপ্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে দল। যদিও এ বিষয়ে বিজেপি বা যুব মোর্চার তরফে এখনও পর্যন্ত কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি।