পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ দিনে দিনে তীব্র রূপ নিচ্ছে। তৃণমূল সুপ্রিমো এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার একটি জনসভায় দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার যত দ্রুত সম্ভব প্রায় ১.৫ কোটি ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইছে। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বিজেপির দ্বিধাহীন রাজনৈতিক কৌশল এবং নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ভোটাধিকার কমানোর উদ্দেশ্য নিয়েই করছে নির্বাচন কমিশনকে চাপ প্রয়োগ করে করা হচ্ছে।
মমতার অভিযোগ, ‘বিজেপির ও নির্বাচনের কমিশনের আঁতাত’ পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অনৈতিহাসিক পরিবর্তন। তিনি বলেন, “যে ভোটাররা বহু বছর ধরে আইনমাফিকভাবে ভোটাধিকার ভোগ করছে, তাঁদের নাম বাকি রয়ে গেছে— অথচ বিজেপি তাদের ভোটারের তালিকা থেকে কেটে ফেলতে চাইছে। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অবজ্ঞা।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের চাপেই নির্বাচন কমিশন অনুপযুক্তভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে’। তিনি বলেন, “এইভাবে ভোটারদের নাম কেটে ফেলা হলে, সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার খর্ব হবে এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যও নষ্ট হবে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ১.৫ কোটি ভোটারের নাম কেটে ফেলার চেষ্টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্বপরিকল্পিত। তিনি বলেন, “এটা শুধু ভুল নয়, এটি স্বৈরাচারী ক্ষমতার অপব্যবহার।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি ভোটারদের বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক সুযোগ নিতে চাইছে।”
এদিনের বক্তব্যে মমতা বলেন, ‘এটি শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন নয়, এটি রাজ্যের ভোটাধিকার শোষণের পরিকল্পনা’. তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে নিশ্চিত করতে যে কোনো বৈধ ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করব এবং মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।” তিনি উল্লেখ করেন, ১.৫ কোটি ভোটার শুধু সংখ্যা নয়, বাংলার সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার।
রাজনৈতিক মহলে এই দাবিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, এ ধরনের সংখ্যা সঠিক ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা মমতার দাবিকে ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরার চেষ্টা হিসেবে দেখাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে ভোটার তালিকা সংশোধন, শুনানি প্রক্রিয়া และ রাজনৈতিক উত্তাপ— সবটিই এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। আগামী দিনে ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত সম্পর্কে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ চোখ গুঁজে রেখেছে।