খরগপুর আসনে উপনির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ভারতী ঘোষ

ভারতী ঘােষ (Photo: IANS)

পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে মাস্টার স্ট্রোক দিতে চলেছে বিজেপি। খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন ভারতী ঘােষ।

মেদিনীপুর লােকসভা কেন্দ্র থেকে দিলীপ ঘােষ জয়ী হয়ে সংসদে যাচ্ছেন। তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনে ভারতী ঘােষকে বিজেপি প্রার্থী করতে পারে বলে বিজেপির অন্দরে খবর। যদিও এই নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মুখ খুলতে চাননি।

খড়গপুর সদর থেকে লােকসভা নির্বাচনের নিরিখে দিলীপ ঘােষ ৪৫ হাজারেরও বেশি ভােটে জয়ী হয়েছেন। বিজেপির এই নিশ্চিত আসনে ভারতী ঘোষই হতে পারেন মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষদের ট্রাম্পকার্ড।


যদিও এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দাবিদারদের মধ্যে অন্যতম প্রেমাদ ঝা। যিনি খড়গপুর শহরের বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এর আগেও তাঁর বিধানসভা ভােটে লড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আরজেডির হয়ে।

এদিকে সবে মাত্র লােকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘােষণা হয়েছে। এখনও অনেক সময় রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে বাংলা থেকে কারা কারা মন্ত্রী হন তা নিয়ে তদ্বির চলছে বিজেপির অন্দরে।

পুলিশ সুপার থাকার সময় ভারতী ঘােষ পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম হাতের তালুর মতাে চেনেন। এই দুই জেলার শাসক দলের প্লাস ও মাইনাস কোনটাই তাঁর অজানা নয়। শুধু শাসক দলই নয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদের সম্বন্ধে কোন কিছুই তাঁর অজানা নয়।

সেই সঙ্গে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তাঁর নিজস্ব জনসংযােগের পাশাপাশি সাের্সও রয়েছে। সেই সঙ্গে ঘাটাল লােকসভা কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী দেবের সঙ্গে যেভাবে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে তা বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মনে ধরেছে মাঠ কখনও ছেড়ে যাননি।

নির্বাচনী প্রচাল্পে সময় সােনা কাণ্ড নিয়ে দিনের পর দিন সিআইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবুও তাঁকে দমানাে যায়নি। বিজেপির মতে কেশপুরে যদি স্বচ্ছ ভােট হতে তাহলে ‘ভারতীকে রােখা সম্ভব হত না।

একা কেশপুরই ভারতীকে হারিয়ে দিয়েছে। কেশপুর থেকে দেব লিড পেয়েছেন ৯২০৭৪ টি ভােট। সব থেকে ভারতী হেরেছেন ৬১৭০ ভােটে। দাসপুর থেকে দেব জয়ী হয়েছেন ১০০৪৪ ভােটে। ঘাটাল থেকে দেব জয়ী হয়েছেন ৫৮৬৬ ভােটে। পিংলায় দেব ১৭৮৪ টি ভােটে ভারতীকে পরাজিত করেছেন। পাশকুড়াতে দেব পরাজিত হয়েছেন ভারতীর কাছে ২৮৪৫ টি ভােটে। ডেবরাতে দেবকে হারতে হয়েছে ৪০১৯ টি ভােটে।

ঘাটাল লােকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে দেব জয়ী হলেও ভারতী জয়ী হয়েছেন দুটিতে। পােস্টাল ব্যালট ছাড়া ১০৯০৭৪ ভােটে দেব জয়ী হয়েছেন। পােস্টাল ব্যালটেও ভারতী থাবা বসিয়েছেন। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে কেশপুরের ভােটে যদি ভারতী থাবা বসাতে পারতাে। তাহলে দেবের লড়াইটা এত সহজ হতাে না । সে কারণেই কেশপুরে ঘাঁটি গেড়ে কৌশল সাজিয়েছিলেন ভারতী ঘােষ ।

নির্বাচনের দিনও এই কেশপুরেই তাঁকে হেনস্থা হতে হয়েছিল। পায়ের নখ উপড়ে গিয়েছিল তাঁর । হেনস্থার মুখে পড়ে ভারতীর চোখে জল সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে দেখেছিল আমজন। প্রাক্তন এই আইপিএস আধিকারিক চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে শুরু করেছেন নতুন ইনিংস।

ঘাটালের মতাে জায়গায় বিজেপি এত ভালাে লড়াই দিতে পারবে তা ভাবতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভারতীকে ভালােভাবে কাজে লাগাবে দল। ঠিক কি কাজে লাগাবে তা এখনও স্পষ্ট নয় । যদিও বিজেপির একাংশ চাইছে ভারতী ঘােষকে খড়গপুর বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করতে কারণ খড়গপুর পুরসভা তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে আনতে সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুল্পে পুলিশ সুপার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিল বলে সেই সময় বিস্তর অভিযােগ করেছিল বিজেপি নেতৃত্ব।

খড়গপুর পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতে দেখা যায় বিজেপির সাতজন জয়ী হয়েছেন পরবর্তী সময়ে। বিজেপির পাঁচজন কাউন্সিলার তৃণমূলে যােগ দেন। খড়গপুর পুরবাের্ড গঠন করে তৃণমূল। এরপর অবশ্য ২০১৬ বিধানসভা ৰ্বিাচনে দিলীপ ঘোষ খড়গপুর শহরের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জ্ঞানসিং সােহনপালকে হারিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চমক দেন। ভাঙন শুরু হয় কংগ্রেসে।

কংগ্রেসের পাঁচজন কাউন্সিলার তৃণমুলে যােগ দেন। খড়গপুর শহরে প্রাক্তন কংগ্রেস পুরপ্রধান বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি। এরপর একে একে সিপিএমের দুই এবং সিপিআইয়ের তিন কাউন্সিলার তৃণমূলের পতাকার তলায় আসেন। খড়গপুর পুরসভার অধীন ৩৫ টি ওয়ার্ড রয়েছে। এই ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে ২৬ টি তৃণমূলের দখলে। কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ৬ টি। ২ টি বিজেপি ও ১ টি সিপিএমের দখলে। সিংহভাগ ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে থাকলেও খড়গপুরে বিজেপিকে রােখা সম্ভব হয়নি।

খড়গপুরে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘােষ পেয়েছেন ৯৩৪২৫ টি ভােট। মানস ভুইয়ার প্রাপ্ত ভােট ৪৮২৯৩। সিপিআইয়ের বিপ্লব ভট্ট পেয়েছে ৮১৫৬ টি ভােট। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে ৮২৭৪ টি ভােট। দিলীপ ঘােষ খড়গপুর সদর থেকে ৪৫০৩২ ভােটে জয়ী হয়েছেন। এই পরিসংখ্যানই সাহস জোগাচ্ছে বিজেপিকে। এখন খড়গপুর সদর বিধানসভা ৰ্বিাচনে দিনক্ষণ ঘােষণা হয়নি। কিন্তু বিজেপির মধ্যে গুঞ্জন এই সদর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভারতীকে প্রার্থী করে মাস্টার স্ট্রোক দেওয়ার।

ভারতী জয়ী হয়ে বিধানসভায় গেলে মমতা বিরােধীতা তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘মা-মেয়ের মুখােমুখি হওয়াটা খুব একটা মন্দ হবে না। ভারতী ঘােষকে সামনে রেখে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় শাসক দলকে ব্যাক ফুটে ফেলার এই কৌশল গ্রহন করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

অন্যদিকে করিমপুর বিধানসভার বিধায়ক মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগর লােকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে সংসদে যাচ্ছেন। এখানেও উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ছে। সেখানে কৃষ্ণনগরের বিজেপির জিত প্রার্থী কল্যাণ চৌবে প্রার্থী হতে পারেন। মুকুটমনি অধিকারীর নামও শােনা যাচ্ছে করিমপুর কেন্দ্রের জন্য। তবে বংলায় বিজেপির ভালাে ফলাফল হয়েছে, ব্যস্ত রয়েছেন সবাই। স্বাভাবিক ভাবে এই নিয়ে এই মুহুর্তে শীর্ষ নেতাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।