দুই হাওড়া স্টেশন-এর মধ্যে ঝাঁ-চকচকে আরও এক হাওড়া স্টেশন

এ যেন এক স্বর্গরাজ্য! স্বপ্নপূরণের বাস্তবতা!

নিজস্ব প্রতিনিধি— দুই হাওড়া স্টেশন আর তাদের মাঝখানে মাটির নীচে স্বপ্নের বাস্তবায়ন৷ কলকাতা মেট্রো আপনাদের জন্যে নিয়ে এসেছে নদীর নিচে দিয়ে মেট্রো সফরের রোমান্স ও রোমাঞ্চ৷ ভারতে যা এই প্রথম! কোলাঘাট থেকে অন্ডাল বা খড়্গপুর থেকে আসানসোল -সবাই মজে এই স্বপ্নপূরণের মেদুরতায়৷ পিছিয়ে নেই ভিনরাজ্যের আগন্ত্তকরাও!

হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড অংশে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে গত ১৫ই মার্চ৷ যে কেউ পূর্ব রেলওয়ে ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া স্টেশন-এ নেমে পৌছে যেতে পারেন ভূগর্ভস্থ নতুন হাওড়া মেট্রো স্টেশনে৷ পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া ডিআরএম অফিস-এর ঠিক পিছনে তৈরি হয়েছে মেট্রো রেলওয়ের এই ভূগর্ভস্থ স্টেশন৷ তীব্র দাবদাহ বা ভ্যাপসা গরমের প্যাচপ্যাচানি উপেক্ষা করে নির্ঝঞ্জাটে অতি দ্রুত ও পকেটের রেস্ত বাঁচিয়ে যদি কেউ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় পৌঁছাতে চান তবে তাঁদের সাদরে স্বাগত জানাচ্ছে হাওড়া মেট্রো স্টেশন৷ শহরতলির যাত্রীদের সুবিধার্থে পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া স্টেশনে ইতিমধ্যে লেগে গেছে মেট্রো স্টেশনের দিক-নির্দেশক নীল বোর্ড৷ বোর্ডের তীর চিহ্ন অনুসরণ করে শহরে ঘুরতে আসা আনকোরা যাত্রীরাও খুব সহজে হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সময় মেপে নিয়ে, বড়ব্লেডের সিলিং ফ্যানের হওয়া খেতে খেতে, দেশি-বিদেশি খাবারের সুঘ্রাণের মায়াবী আহ্বান উপেক্ষা করে দ্রুত পদ-সঞ্চারণে সহজে খুঁজে নিতে পারছেন বহু আলোচিত হাওড়া মেট্রো স্টেশন৷ হাওড়া স্টেশনের বাইরের যাত্রীরাও ট্যাক্সি স্ট্যান্ডকে ডাইনে বা বাঁয়ে পাস কাটিয়ে পূর্ব রেলের ডি.আর.এম. অফিসকে সাক্ষী রেখে, হাওড়া ব্রিজ ও হাওড়া ফেরিঘাটকে টা-টা করে চলে আসছেন এই নতুন আকর্ষণের অবগাহণে জারিত হতে৷ আসতে আসতে উপরি হিসাবে মিলছে গঙ্গার এক ঝলক স্নিগ্ধ, ঠান্ডা হাওয়া৷


একবার হাওড়া মেট্রো স্টেশন পৌঁছে যেতে পারলে অপেক্ষা করছে এক নতুন বিষ্ময়৷ মাটির নিচের প্ল্যাটফর্মে নামার জন্য এখানে রয়েছে একাধিক এস্কালেটর ও লিফট৷ স্বাস্থ্য সচেতনরা অবশ্য লিফ্ট, এস্কালেটর না চড়ে সিঁড়ি দিয়েই অনায়াসে নেমে যাচ্ছেন নিচে৷ নিচে নেমেই দুঃসহ গরমের থেকে মিলছে মুক্তি—-কারণ পুরো হাওড়া মেট্রো স্টেশন আপনাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে শীতাতপের উষ্ণতায়৷ এখানে রয়েছে অনেক বুকিং কাউন্টার৷ স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার মেশিন, এএফসি -পিসি গেট আর তার সাথে উপরি পাওনা হিসাবে রয়েছে নয়নাভিরাম মুরাল ও দেওয়ালজোড়া পেইন্টিং—যা আপনার চোখ টানবেই৷ আপনার কাছে স্মার্ট কার্ড বা অ্যাপ নির্ভর কিউ আর কোড বেসড টিকিট যদি না থাকে তবে সহজেই এই কাউন্টার বা মেশিন থেকে টোকেন বা কাগজের কিউ আর কোড বেসড টিকিট সংগ্রহ করে চলে আসুন মাটির নিচে ৩০ মিটার গভীরে, ভারতের গভীরতম মেট্রো স্টেশন হাওড়ায়৷ প্ল্যাটফর্ম-এ নেমে আরো এক চমক আপনার জন্য অপেক্ষা করছে৷ এই করিডরের হাওড়া ও এসপ্ল্যানেড স্টেশন-এ রয়েছে ডাবল ডিসচার্জ প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ এই দুই স্টেশনে ট্রেন থামলে ট্রেনের দু’দিকের দরজাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে খুলে যায় আর তার সাথে খুলে যায় প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর৷ অবাক বিস্ময়কে সাথী করে যে কোনো একদিকের প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনি সেঁধিয়ে যান অত্যাধুনিক ট্রেনের আরামপ্রদ অন্দরে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে দরজা বন্ধ আর ট্রেন ছুটতে শুরু করেছে এসপ্ল্যানেড বা হাওড়া ময়দানের দিকে৷ এসপ্ল্যানেডের দিকের আপনি যাত্রী হলে মিলবে গঙ্গার নিচে দিয়ে মেট্রো যাত্রার অনাস্বাদিত আনন্দ৷ যা মনের মণিকোঠায় অমরত্ব লাভ করবে অচিরেই৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৭ দিনে, হাওড়া মেট্রো স্টেশনে যাত্রী হয়েছে ৩, ১৪, ৪৫৯৷ জনস্রোতের বহর দেখে অনায়াসেই বলে দেওয়া যায় যে আগামীদিনে এই সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে৷