২১ মে পর্যন্ত সাবধানে থাকতে হবে : মমতা

করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের পর এমনই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Kolkata | April 28, 2020 3:21 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের পর এমনই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কিছুই বলার সুযোগ পাননি মমতা। তাঁর নিজের কথায় ‘বোবা’র মতো বসে ছিলাম।

এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বুঝতে পারছি না কতদিন লকডাউন চলবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয়েছে এটা অনেকদিন চলতে পারে। লকডাউন কতদিন হবে সেটা একেবারেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তবে আমি অবশ্য ফুল লকডাউনের পক্ষে। অন্তত ২১ মে পর্যন্ত আমাদের সবধানে থাকতে হবে। এই সময় পর্যন্ত রাজ্যের রেড জোন, অরেঞ্জ জোন এবং গ্রিন জোন এলাকায় আমাদের দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি– এই ত্রিধারা পরিকল্পনা করতে হবে।

রেড জোন এলাকার বাসিন্দাদের একেবারেই বাড়ির বাইরে পা না রাখার জন্য আবেদন রাখেন মমতা। অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোনে নিয়ম ক্রম অনুযায়ী শিথিল করার ইঙ্গিত দেন মমতা। গ্রিন জোন অর্থাৎ যেখানে সংক্রমণ তেমন ছড়ায়নি সেখানে কিছু দোকানপাট খোলা যেতে পারে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

মোট কথা, দেশে লকডাউনের সময়সীমা বর্ধিত হোক বা না হোক, রাজ্যে এই নিয়ম বহাল রাখার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে জনগণের সতর্কতার জন্য সোমবার কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কোন কোন এলাকা কনটেইনমেন্ট জোনের মধ্যে থাকছে তারও একটি তালিকা প্রকাশ করা হয় নবান্ন থেকে।

সেইসঙ্গে কোভিড ম্যানেজমেন্টের জন্য মন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিটির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার চেয়ারম্যান হিসেবে থাকছেন অমিত মিত্র। অন্যান্যদের মধ্যে থাকছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এছাড়া কমিটিতে রাখা হয়েছে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিবকে। কো-অর্ডিনেটর হিসেবে থাকলে পি বি সেলিম।

রাজ্যের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী আরও কয়েকটি ঘোষণা করেন। যেমন এখন থেকে করোনায় যদি কেউ আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, বাড়িতে স্থানাভাব না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাদের হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হচ্ছে। কারণ মমতার মতে বাড়ি সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা। বিদেশেও অনেক জায়গায় এই রীতিই চালু রয়েছে।

এর ফলে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ওপর চাপ কমবে। আবার অনেকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে চান না বলে রোগের তথ্য গোপন করতে চান, সেটাও কমবে। তবে বিষয়টা রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে। আর যারা একেবারে সংগতিহীন, বাড়িতে দশ বারও জন এক জায়গায় থাকেন, তাদের সরকারি কোয়ারেন্টাই সেন্টারে পাঠানো হবে।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ২১ মে পর্যন্ত সরকারি অফিসে ২৫ শতাংশ করে রোটেশন পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশ কর্মচারী নিয়ে কাজকর্ম চলবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ১০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এতদিন পর্যন্ত অত্যাবশকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি চালু ছিল। সোমবার থেকে অত্যাবশকীয় নয়, এমন পণ্যের ক্ষেত্রেও অনলাইন, মোবাইল ইত্যাদি প্রযুক্তির সাহায্যে হোম ডেলিভারির অনুমতি দেওয়া হল। যাতে মানুষ ঘরে বসেই পরিষেবা পেতে পারেন।

রাজ্যে লকডাউন পরিস্থিতি যে মে মাসের তিন তারিখেই শেষ করা হচ্ছে না, এদিনের ঘোষণা থেকে স্পষ্ট হল। সেই সুত্রেই ২১’মে পর্যন্ত কয়েকটি ক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ রাখা, আন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ রাখা, ট্রেন চলাচল একেবারেই বন্ধ রাখা, জরুরি প্রয়োজন এবং শুধুমাত্র আলোচনা সাপেক্ষে রাজ্যগুলির মধ্যে বাস পরিষেবা চালু করা।

তবে লকডাউন নিয়ে কেন্দ্র হঠাৎ হঠাৎ সার্কুলার জারি করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এই নিয়ে সোমবার সরব হন মমতা। বলেন, কেন্দ্র একদিকে বলছে, লকডাউন কড়া করতে, আবার বলছে দোকানপাট খুলতে। আমরাও চাই দোকান খুলুক, কিন্তু দোকান খুললেই তো মানুষ বাড়ি থেকে বেরোবে। তখনই তো লকডাউন ব্যর্থ হবে। সিদ্ধান্ত তো একটাই হওয়া উচিত।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন কোন দোকানপাট খোলার কথা কেন্দ্র বলছে, সেটা মুখ্যসচিব চিঠি দিয়ে জানবেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌরার কাছে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজ্যের কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের আর্থিক নীতির সমালোচনা করেন। মমতা বলেন, একশ দিনের কাজের ক্ষেত্রে, পাটশিল্প, চা বাগানের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মাসে দশ হাজার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া উচিত ছিল। আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা জাপানের তুলনায় কেন্দ্র কোভিড খাতে যে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা নেহাতই সামান্য, দেশের জিএসডিপি’র মাত্র ১ শতাংশের মতো।

অন্যদিকে কোভিড পরিস্থিতিতে সাংসদদের বেতন কমানো হয়েছে। এম পি ল্যাডের বরাদ্দে কাটছাঁট করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বাড়ানো বন্ধ হয়েছে। আমলাদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বেতন-বরাদ্দ কমিয়ে কোভিড তহবিল গঠন করা কোনও কৃতিত্ব নয়। অনেক প্রকল্প কেবল দেখনদারির জন্য রয়েছে। সেগুলির পুনর্বিন্যাস করতে পারলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চিত করতে হত না।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আবেদন জানান, এফআরবিএম নীতিতে রাজ্যে ঋণগ্রহণের উর্ধসীমা জিএসডিপির তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করতে। বাংলার জন্য মোরাটোরিয়াম অর্থাৎ ঋণের সুদ একবছরের জন্য মুকুব করতে। কোভিডের আগে ঘোষিত পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ বর্তমান পরিস্থিতিতে রিভিউ করতে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা খুব খারাপ। রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। কেন্দ্রের কাছেও বকেয়া অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। ‘নো আর্নিং, ওনলি বার্নিং’। প্রতি মাসে ৫ হাজার কোটি টাকা লস হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এই রাজ্যের সরকার মানকি। তাই কারও বেতন না আটকে, যতটা পারছে করা হচ্ছে। এত কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। চিকিৎসার সরঞ্জাম সাধ্যমতো দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, শুধুই ভাষণ, নো রেশন। বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে কেন্দ্রকে।

মোদির ভিডিও কনফারেন্সের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য ভালো করলে কেউ প্রশংসা করে না, খারাপ করলে নিন্দা করে। জনঘনত্বের দিক থেকে উত্তরপ্রদেশের পরই পশ্চিমবঙ্গ। তা সত্ত্বেও এখানে লকডাউন মানানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। ওষুধও কিনতে হচ্ছে, পোশাকও কিনতে হচ্ছে। রেশনও দিতে হচ্ছে, ঘরভাড়াও দিতে হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ঝগড়া করতে চাই না। মানুষের স্বার্থে কোভিডের সঙ্গে ফাইট করতে চাই। কিন্তু এই যে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল এসেছেন, তারা এসে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্য সচিবকে ডাকাডাকি করছে। এখন রাজনীতির আক্রমণ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন মমতা।