বাংলাদেশে আবারও শুরু হয়েছে চরম অস্থিরতা।ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুর পর পরিস্থিতি দ্রুত হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ একাধিক জায়গায় হামলা, সংবাদপত্রের দপ্তরে অগ্নিসংযোগ এবং বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উত্তেজনা তুঙ্গে। এই অশান্তির প্রভাব যাতে ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর না পড়ে, সে জন্য সীমান্ত এলাকাজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে দিল্লি। বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোরে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে।থার্মাল ক্যামেরা, নাইট ভিশন ডিভাইস, সিসিটিভি এবং ড্রোনের সাহায্যে সারাক্ষণ নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ মিলিয়ে প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত । এর মধ্যে প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী ও জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেই সব জায়গায় সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে বহুগুণ।
সীমান্ত অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি এলাকা কোচবিহার জেলার অন্তর্ভুক্ত, প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিনাজপুরে ২৫০ কিলোমিটার এবং উত্তর দিনাজপুরে ২২৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা। দিনাজপুর ও মালদহ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় এবং কোচবিহারের বিস্তীর্ণ অংশে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম ও জনপদ কার্যত নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
২২ কিলোমিটার প্রশস্ত শিলিগুড়ি করিডর রক্ষায় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অসমের ধুবড়ি সংলগ্ন বামুনি, বিহারের কিশনগঞ্জ এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, এই তিন এলাকায় থাকা সামরিক ঘাঁটিকে সতর্ক করা হয়েছে। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও চিন দ্বারা বেষ্টিত এই করিডর ভৌগোলিক কারণেই অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ত্রিশক্তি কর্পসের তৎপরতাও বেড়েছে পাশাপাশি হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে রাফাল, বিভিন্ন মিগ ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র আগেই মোতায়েন করা হয়েছিল।সেই সব জায়গাতেও বাড়ানো হয়েছে প্রস্তুতি।
গোয়েন্দা রিপোর্টে আরও উদ্বেগজনক তথ্য মিলেছে।বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিক ও কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর বড়সড় হামলার ছক কষছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ভারতীয় হাইকমিশন ও ভিসা দপ্তরকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনার তথ্যও সামনে এসেছে। এই ষড়যন্ত্রে একাধিক কট্টরপন্থী সংগঠনের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত মিলেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সীমান্ত ও কূটনৈতিক নিরাপত্তায় কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না ভারত, একথা স্পষ্ট।