• facebook
  • twitter
Wednesday, 15 January, 2025

আবাসে নাম তুলতে কাটমানি, টাকা ফেরত চাওয়ায় ‘খুন’ মুর্শিদাবাদে

আবাস যোজনার তালিকায় নাম তোলার জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক প্রৌঢ়।

প্রতীকী চিত্র।

আবাস যোজনার সার্ভে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিতর্ক চলছে। আবাসের তালিকা নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আবাসের সার্ভে ও তালিকা তৈরি সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত আবাস নিয়ে অশান্তি আঁচ অনেকটাই কম। এরই মধ্যে ঘটে গেল এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। আবাস যোজনার তালিকায় নাম তোলার জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক প্রৌঢ়।

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মিঠিপুর এলাকার বাসিন্দা কালু শেখ (৫২) আবাসের তালিকায় নাম তোলার জন্য টাকা দিয়েছিলেন এলাকার তৃণমূল নেতা মিঠু শেখকে। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় প্রৌঢ়ের নাম ওঠেনি। এরপর মিঠুর কাছে টাকা চাইতে যান তিনি। অভিযোগ, টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলে মিঠু। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান এই প্রসঙ্গে বলেন, কোনও ব্যক্তি অপরাধ করলে আর দায় দলের উপরে বর্তায় না। আইন আইনের মতো চলে। দলের কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। মিঠুর আত্মীয় সৌরভ হালসনার দাবি, খুনের প্রশ্নই নেই। মিঠুর সঙ্গে বচসা হচ্ছিল কালু শেখের। সেই সময় আচমকাই মাটিতে পড়ে যায় কালু। স্ট্রোক জাতীয় কিছু হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালু শেখ দীর্ঘ দিন ধরেই আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তালিকা নাম তুলিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় তৃণমূল নেতা মিঠুকে পাঁচ হাজার টাকা দেন তিনি। কিন্তু তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর নিজের নাম দেখতে পাননি কালু। এতে তিনি চরম ক্ষুব্ধ হন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মিঠুকে পাঁচ হাজার টাকাও তিনি দিয়েছিলেন। দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়।

অভিযোগ, বচসা চলাকালীন লোহার রড দিয়ে কালুকে বেধড়ক মারধর করেন মিঠু। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কালু। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আঘাতে কান থেকে রক্তপাত শুরু হয় তাঁর। আক্রান্তকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আতিউরকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। রবিবার সেখানেই মৃত্যু হয় কালুর।

মৃতের বউদির দাবি, আবাসের ঘরের জন্য টাকা নিয়েছিলেন তৃণমূলের মিঠুন। তালিকায় নাম না থাকায় সেই টাকাই ফেরত আনতে যান কালু। সেই সময় তাঁকে মারধর করা হয়। কালুর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। স্থানীয় এক বাসিন্দার বক্তব্য, গতবারের সমীক্ষার সময় তৃণমূলের অনেক নেতাই টাকা নেন। কিন্তু নাম আসেনি। আমরা কিছু বলতে গেলে ভয় দেখানো হচ্ছে।

স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্য সেতাবুল ইসলামও অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযুক্ত তৃণমূলের কেউ নন। তাঁর কথায়, যিনি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তিনি তৃণমূলের কেউ নন। প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য রেশমি বিবি বলেন, আবাস যোজনার তালিকায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তালিকায় তৃণমূল নেতা ও তাঁদের আত্মীয়দের নাম থাকলেও যোগ্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। দোষীকে গ্রেপ্তার করা না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।