বাংলাকে বদনাম দেওয়ার চেষ্টা চলছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ মমতার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

একদিকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতার আশ্বাস অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ। বুধবার দ্বৈত ভূমিকায় নামতে দেখা গেল রাজ্য সরকারকে। সুত্রের খবর, কেন্দ্রীয় আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে যথেষ্ট সুর নরম করে এদিন দুপুরেই মুখ্যসচিব চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। এরই মধ্যে করোনা কিটের ত্রুটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রাজ্য সফর নিয়ে চিঠি এবং পাল্টা চিঠির পত্রাঘাত পর্বের মধ্যেই করোনা কিট নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা চলছে । মমতা এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রাজ্য পরিদর্শন নিয়ে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেন, রোজ রোজ বাংলায় লোক পাঠানো হচ্ছে। কে খেতে পাচ্ছে না, কে স্নান করতে পারছে না তা দেখতে।

মমতা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আবার সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার নিয়ে রাজ্যকে কড়া চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরক্ষণেই সংযত সুরে বলেন, অবশ্য চিঠি যে কেউ পাঠানে পারে। সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারের প্রসঙ্গ তোলায় পরিযায়ী শ্রমিকের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গটি রাজ্যের পক্ষেই যাবে বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী।


কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে সংঘাতের মধ্যেই করোনা কিট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রটির দিকটিও তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তিন ধরনের কিট দিয়ে করোনা পরীক্ষা হয়। র‍্যাপিড টেস্ট কিট, বিজিআই-আরটিপিসিআর কিট এবং অ্যান্টিজেন কিট। এর মধ্যে করোনা র‍্যাপিড টেস্টের জন্য যে ১০ হাজার কিট দেওয়া হয়েছিল রাজ্যকে, ত্রুটি থাকায় তার সবটাই ফেরত চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার যে ২২০’টি টেস্ট হয়েছিল, তা কোনও কাজেই এল না।

বর্তমানে র‍্যাপিড টেস্ট বন্ধ রাখতেও নির্দেশ দিয়েছে আইসিএমআর। আর করোনা পরীক্ষার অ্যান্টিজেন কিট বাংলায় পাওয়া যায় না। আবার বিজিআই-আরটিপিসিআর’এর যে কিট পাঠিয়েছিল তারও কিছু পরিমাণ পরীক্ষায় ক্রটি বেরিয়েছে।

এছাড়া আইসিএমআর-এর নিয়ম মেনে এই কিট দুটো সেট পাঠাতে হয়, সেখানে একটা সেট দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। এখনও পর্যন্ত ২০২৫’টা মাত্র কিট কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পাওয়া গিয়েছে। সেখানে বুধবার সন্ধে পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৭০৩৭’টি। যার জন্য প্রায় ১৪ হাজার কিট লাগার কথা। নেহাত, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর আগে থেকে অর্ডার দিয়ে কিছু কিট স্টক রেখেছিল তা না হলে বিপত্তি ঘটত।

মঙ্গলবারই একদিনে ৮৫৫’টি টেস্ট হয়েছে। পর্যাপ্ত কিট থাকলে আরও পরীক্ষা হত। এই পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন সময়মতো টেস্ট না হওয়ায় মানুষের জীবন বিপন্ন হলে তার দায় কে নেবে?

কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমার ঠিক প্ল্যানিংটা মাথায় ঢুকছে। তবে বাংলায় করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন মুখ্যসচিবও।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করে দিয়ে বলেন, যেভাবে মাসে পাঁচ কেজি করে চাল বিনামুল্যে দেওয়া হচ্ছিল, সেই ব্যবস্থা চালু থাকবে। কোনও কোনও রেশন দোকানে স্থানাভাব থাকায় হয়তো দু’বারে রেশন দেওয়া হচ্ছে। তবে অপবাদ এড়াতে পূর্বঘোষিত প্যাকেটে চাল বন্টনের পরিকল্পনা থেকে সরে এল রাজ্য সরকার।

মমতা এদিন জানিয়ে দেন বাদুড়িয়ায় রেশন বন্টনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও যোগ নেই। কোনও এনজিও এই বন্টনের সঙ্গে যুক্ত। মুখ্যসচিব এদিন জানান, করোনা কিট ছাড়াও পিপিই, এন-নাইন্টি ফাইভ মাস্ক ইত্যাদি কেন্দ্রের কাছ থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র মাত্র ৭ হাজার এন-নাইন্টি ফাইভ মাস্ক এবং ১০ হাজার পিপিই পাঠিয়েছে।

রাজ্য সরকার নিজে থেকে বাজার থেকে সংগ্রহ করে কাজ চালাচ্ছে। সচেতনতার বার্তা দিতে বুধবারও নবান্ন থেকে বেরিয়ে খিদিরপুরে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গাড়িতে বসেই মুখ্যমন্ত্রী এদিনও হিন্দি ও বাংলাতে মাইকিং করে সচেতনতার সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দেন। বলেন, রোগ রুখতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন কিন্তু মানসিকভাবে সকলের পাশে থাকুন।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করার জন্য পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। বাড়িতে বসেই রমজান মাস পালন করার অনুরোধ জানান। বলেন, করোনার লড়াইতে জয়ী হলে সবাই মিলে উৎসব পালন করা যাবে। খিদিরপুরের পর পার্কসার্কাস, ৪ নম্বর ব্রিজ, বালিগঞ্জ ফাড়িতেও একইভাবে মানুষকে ঘরে রাখতে পথে পথে ঘোরেন মমতা।