দিলীপ-মুকুলদের নিয়ে বৈঠক অমিত শাহ’র

লােকসভা ভােটে বাংলায় ১৮ টি আসনে জিতেছে বিজেপি। কম নয়! প্রত্যাশা ছাপিয়ে একটা লম্বা লাফের মতােই।

Written by SNS Kolkata | September 12, 2019 3:42 pm

অমিত শাহ (File Photo: IANS)

লােকসভা ভােটে বাংলায় ১৮ টি আসনে জিতেছে বিজেপি। কম নয়! প্রত্যাশা ছাপিয়ে একটা লম্বা লাফের মতােই। কিন্তু তারপরেও যেসব ভাল নেই বাংলা বিজেপি’তে রােজ প্রমাণ পাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সদস্যতা অভিযানের পর বাংলায় খাতায়কলমে বিজেপি’র সদস্য নব্বই লাখের বেশি বেড়েছে। কিন্তু বুথস্তরে সংগঠনের কী হাল?

দলের মধ্যে কোন্দল যে তীব্র তা খােদ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষের কথাতেই ঘনঘন প্রকাশ পাচ্ছে। বড় কথা হল, একুশের লড়াইয়ের জন্য এখনও কোনও স্পষ্ট রােডম্যাপ তৈরি করতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। ঠিক এহেন পরিস্থিতিইে আজ বুধবার দিলীপ ঘােষ, মুকুল রায়দের দিল্লিতে ডেকে পাঠালেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কী হতে পারে এই বৈঠকে? শুধু বাংলার নেতারা নন, বিজেপির সর্বভারতীয় সংগঠনের তামাম নেতারা জানেন, অমিত শাহ হলেন হার্ড টাস্ক মাস্টার! নরম কথার প্রশ্নই নেই। রেজাল্ট চান তিনি। তাহলে? রাজ্য বিজেপি’র একাংশ নেতার মতে, লােকসভা ভােটের ‘কম্বিনেশন’ হয়তাে ভাঙা হবে না। 

দিলীপ ঘােষই সভাপতি পদে থাকবেন, সুব্রত চট্টোপাধ্যায় থাকবেন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তবে দলের মধ্যেই একটা ধারণা তীব্র হচ্ছে যে এই বৈঠকেই হােক বা খুব শিগগির রাজ্য বিজেপি’তে একজন ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট নিয়ােগ করে দেবেন অমিত শাহ। দিলীপ ঘােষকে সভাপতি রেখে বকলমে তিনিই দল চালাবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই দায়িত্বই বা কাকে দেওয়া হতে পারে? মুকুল রায়? তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সঙ্ঘ পরিবার থেকে বিজেপি’র সংগঠনে এসেছেন দিলীপবাবু। সাধাসিধে, স্পষ্ট বাক এবং ব্যক্তিগত জীবনযাত্রায় অতিশয় সৎ বলেই পরিচিত তিনি। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড পরিশ্রমও করতে পারেন। তার সােজাসাপ্টা কথার জন্য ইতিমধ্যে বাংলার একাংশ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তাও বেড়েছে তাঁর। তবে তার রাজনৈতিক মেধা নিয়ে বিজেপির অনেকেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে মুকুল রায় সহ অন্য দল থেকে যাঁরা বিজেপি’তে এসেছেন তাদের অনেকের সঙ্গেই তিনি মিলেমিশে থাকতে পারছেন না বলে অভিযােগ।

বরং দলের মধ্যে আলােচনায় আকছার তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলছেন বলে ক্ষোভ রয়েছে বিজেপি’তে। এই অবস্থায় সম্প্রতি দলের সাংগঠনিক বৈঠকেই একবার কৈলাস বিজয়বর্গীয় স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়েছিলেন, বাইরে থেকে যারা আসছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে। মন বড় না করলে দল বড় হবে না। কিন্তু তারপরেও যে সেসব থেমেছে তা নয়। অনেকের মতে, এই বিষয়ও উঠতে পারে এদিনের বৈঠকে।

সংগঠনে মুকুল রায়ের গুরুত্ব বাড়ানাের দাবিও উঠতে পারে দলের মধ্যে থেকেই। প্রায় দু’বছর হতে চলল বিজেপিতে যােগ দিয়েছেন মুকুলবাবু। এখনও পর্যন্ত তাঁকে কেবল বিজেপি’র ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভের সদস্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লােকসভা ভােটের সময় বাংলায় নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কিন্তু তিনি সংগঠনে এখনও পর্যন্ত কোনও পদ পাননি। তা না পাওয়ায় কর্তৃত্ব নিয়ে কাজ করতে যে তার অসুবিধা হচ্ছে তা রাজ্য বিজেপি’র অনেকেই বুঝতে পারছেন।

অথচ তৃণমূল যখন জাতীয় রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে, তখন তার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুলবাবু। কেন্দ্রে জাহাজ ও রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাছাড়া রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। রাজ্য বিজেপি’র অনেকের তুলনায় তাঁর রাজনৈতিক উচ্চতা অনেক বেশি। বিজেপি’র অনেক রাজ্য নেতা মনে করছেন, মুকুলবাবুকে হয়তাে বাংলার সংগঠনে কোনও পদ নাও দিতে পারেন অমিত শাহ। তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সংগঠনে কোনও পদ দিয়ে কৈলাসের সঙ্গেই বাংলার সহ পর্যবেক্ষক করে দিতে পারেন দলীয় সভাপতি। তবে এসবই নানারকম অভ্যন্তরীণ অঙ্ক ও আশার কথা। অমিত শাহ প্রকৃতপক্ষে কী দাওয়াই দেন এখন সেটাই দেখার।