নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের তরফে এক্স হ্যান্ডলে জানানো হয়েছে, কালীগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছেন ওই কেন্দ্রেরই প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের কন্যা আলিফা আহমেদ। ৩৮ বছরের আলিফা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কালীগঞ্জেরই একটি আসন থেকে জেলা পরিষদ সদস্য ছিলেন তিনি। আলিফা আহমেদ বলেন, ‘দল বড় দায়িত্ব দিয়েছে। এবার একেবারে বুথ স্তর থেকে সকলকে নিয়ে, একসঙ্গে আলোচনা করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ব। বাবা নাসিরুদ্দিন আহমেদ মানুষের জন্য যে কাজ করে গিয়েছেন, তা সকলেই দেখেছেন। এবারের নির্বাচনে বাবার ইমেজটাই কাজে লাগবে।’
মঙ্গলবার সকালে তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘আলিফা এর আগে কালীগঞ্জেরই একটি আসন থেকে জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে নতুন নন। বাবার হাত ধরে তিনি স্থানীয় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। কালীগঞ্জের সমস্ত মানুষ তাঁকে চেনেন, ভালোবাসেন এবং তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভোটের দিনের জন্য। গত বিধানসভা নির্বাচনে নাসিরুদ্দিন প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এ বারের উপনির্বাচনেও রেকর্ড ব্যবধানে দল জিতবে বলে প্রত্যয়ী তৃণমূল।’
কালীগঞ্জের প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত বিধায়কের মেয়েকে যে বেছে নেওয়া হতে পারে, এমন জল্পনা গত কয়েকদিন ধরেই ছিল সংশ্লিষ্ট মহলে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জায়গায় জনসংযোগমূলক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে আলিফা আহমেদকে। এর বাইরে কালীগঞ্জে তৃণমূলের যুব সভাপতি মুরশালিন শেখ, কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেফালি খাতুন, নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তারান্নুম সুলতানার নামও উঠে এসেছিল আলোচনায়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রয়াত বিধায়ক আলিফাকেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০১১ ও ২০২১ সালে জয়ী হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িতেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন কালীগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘লাল’ নামে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনমাস বিধায়কহীন কালীগঞ্জ। নিয়ম অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হত নির্বাচন কমিশনকে। অবশেষে গত রবিবার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে কালীগঞ্জ আসন থেকে ৫৩.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমেদ। বিজেপির প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩০.৯১ শতাংশ ভোট। ফলে ব্যবধানটা ছিল অনেকটাই। প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। সেই ব্যবধান আরও বাড়াতে চান তাঁর মেয়ে আলিফা। এর ফলে একদিকে যেমন দলের শক্তি প্রমাণিত হবে, ঠিক তেমনই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে উজ্জীবিত হবেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০১১ সালে ‘লাল দুর্গ’ কালীগঞ্জ বিধানসভা আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। ২০১৬ সালে এখানে হেরে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ সালে ফের পুরনো প্রার্থী নাসিরুদ্দিন আহমেদকে লড়াইয়ের ময়দানে এনে জয়ের স্বাদ পায় তৃণমূল। এবার নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুতে অসমাপ্ত কাজের ভার তাঁরই মেয়ে আলিফার কাঁধে তুলে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
প্রসঙ্গত, ২৬ মে কালীগঞ্জ সহ দেশের পাঁচ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের গেজেট নোটিফিকেশন জারি হয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ জুন। ৩ জুন মনোনয়ন পত্রের স্কুটিনি হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৫ জুন। ১৯ জন ভোটগ্রহণ এবং ২৩ জুন ভোটগণনা হবে। ২৫ জুনের মধ্যে গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বাংলার কালীগঞ্জ কেন্দ্রের পাশাপাশি চার রাজ্যের পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে ১৯ জুন। কালীগঞ্জ ছাড়াও গুজরাটের কাদি, বিসাবদর, পাঞ্জাবের লুধিয়ানা পশ্চিম এবং কেরলের নীলাম্বুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে ওই দিন।