সম্পূর্ণ সিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন : মুখ্যসচিব

রাজ্যের নয় থেকে দশটি করোনা হটস্পট এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করে সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন তথা সিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।

Written by SNS Kolkata | April 11, 2020 3:33 pm

প্রতীকী ছবি (Photo by Yasuyoshi CHIBA / AFP)

রাজ্যের নয় থেকে দশটি করোনা হটস্পট এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করে সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন তথা সিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার মুখ্যসচিব রাজীব সিন্হা নবান্নে জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় হাওড়া হাসপাতালের সুপার সহ রাজ্যে মোট ১২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২। এর মধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। ফলে এই মুহুর্তে অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯।

তবে মুখ্যসচিব এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে অ্যাক্টিভ করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫। তবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যে সমস্ত গ্রাম কিংবা এলাকায় কোভিড ১৯ পজেটিভ কেস ধরা পড়েছে সেই গ্রাম বা এলাকাগুলি পুরোপুরি সিল করে দিতে পারে সরকার। অর্থাৎ রাজস্থানের ভিলওয়ারা গ্রামের মতো সেইসব গ্রাম বা শহর সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করা কিংবা বেরনো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে সরকার। শুক্রবার নবান্নে মুখ্যসচিবের কথা থেকে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।

মুখ্যসচিব এদিন জানান, আমরা চাই না করোনা সংক্রমণ আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ুক। তবে সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কথাও ভাবতে হবে। সূত্রের খবর হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, কালিম্পং সহ বিভিন্ন জেলার একাধিক গ্রাম ও শহরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হটস্পটগুলির দিকে কড়া নজর দিতে শুক্রবার একটি কমিটি তৈরি করল স্বাস্থ্য ভবন।

মুখ্যসচিব এদিন স্পষ্ট করেন বলেন, রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামীণ এলাকায় হটস্পট চিহ্নিত গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে হটস্পট চিহ্নিত এলাকার দোকান বাজার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। কাউকেও হটস্পট এলাকার রাস্তাঘাট দিয়ে চলাফেরা করতে দেওয়া হবে না। হটস্পট এলাকায় মানুষের বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌছে দেওয়া হবে। এই কাজে স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগানো হবে।

প্রসঙ্গত ঠিক এভাইে রাজস্থানের ভিলওয়াড়া গ্রামে কোনও এক চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ার পরে গোটা এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ওই এলাকায় যাতে কেউ না ঢোকে কিংবা বের হয় সেই চেষ্টা করেছিলেন এলাকার মানুষই। মোদি সরকার জনতা কারফিউ ঘোষণা করার আগেই। সেই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজস্থানের স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রোহিত কুমার সিং।

বাংলাতেও সেই মডেলকেই অনুসরণ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব এদিন জানিয়ে দেন, গত সাত থেকে দশ দিন কোভিড ১৯ আক্রান্ত্রের সংখ্যা এক লাফে খুব একটা বাড়েনি। একদিনে বড়জোর আট থেকে বারো জন আক্রান্ত হয়েছেন। আবার সুস্থও হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। যেটা রাজ্যের পক্ষে ভালো। একই কথা বলেন বিশ্ব উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক ডা. অভিজিৎ চৌধুরীও।

যদিও কোভিড ১৯ সংক্রমণ রুখতে যথেষ্ট সজাগ রয়েছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো শুক্রবারই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের সংখ্যা ৫৬২ থেকে ২০’টা বাড়ানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২০৯৫’টা কোভিড টেস্ট হয়েছে।

করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির খণ্ডন করে মুখ্যসচিব ফের স্পষ্ট করে দেন, পশ্চিমবঙ্গে এখনও অ্যাক্টিভ কোভিড পজেটিভ হয়ে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন।

মুখ্যসচিব বলেন, কেউ কেউ কলকাতা করপোরেশনের তথ্য নিয়ে করোনা মৃত্যু নিয়ে নানারকম পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। কিন্তু মৃত্যুর কারণ অর্থাৎ কজ অফ ডেথ নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে কলকাতা করপোরেশনের কোনও এক্তিয়ার নেই।

আসলে গত কয়েকদিনে কলকাতা, শহরতলি এবং জেলার কিছু হাসপাতালে এমন কয়েকজন রোগির মৃত্যু হয়েছে যাদের মৃত্যুর আগে কিংবা পরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়লেও শরীরে অন্যরোগের উপসর্গ ছিল। এক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ করোনা নাকি অন্য কোনও রোগের উপসর্গ তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব কো-মরবিডিটির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

এখন যাঁদের শরীরের অন্য অসুস্থতার সঙ্গে করোনা সংক্রমণও রয়েছে, তাদের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছে। মুখ্যসচিব জানান, ওই কমিটির অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত অ্যাক্টিভ করোনায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের।

যদিও গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এমন অনেকেই মারা গিয়েছেন যাদের করোনা সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্রনিক রোগও ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রেও করোনাকেই মৃত্যুর কারণ বলে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি কো-মরবিডিটি থাকলে করোনাকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে না। এবং করোনায় মৃতের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানকেই মান্যতা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকও।
অথচ এক্ষেত্রে যাদের শরীরে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ ছাড়াও হৃদযন্ত্র, কিডনি, হাইপারটেনশন ইত্যাদির উপসর্গ রয়েছে, তাদের মৃত্যু ঘটলে সৎকার করা হচ্ছে ধাপায় করোনা রোগিদের জন্য চিহ্নিত এলাকায়। যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে কলকাতা পুরসভা।

সেক্ষেত্রে ধাপায় করোনা আক্রান্তদের সরকারের সংখ্যার থেকে পাওয়া করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা আর সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানের মধ্যে ফারাক থেকে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অডিট রিপোর্টকেই চুড়ান্ত বলে ধরে নিচ্ছে রাজ্য সরকার এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারও।