• facebook
  • twitter
Thursday, 11 December, 2025

এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২ ‘পাণ্ডা’

মাঝি সরকারের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে সহজ-সরল মানুষ ভুল করেছেন। এসআইআর ফর্ম পূরণ না করলে ভবিষ্যতে তাঁদের সমস্যা হতে পারে।

প্রতীকী চিত্র

আদিবাসী সম্প্রদায়কে এসআইআর গণনা প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে দলবদ্ধ ভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে জঙ্গলমহলে। দেশের ‘আদি নাগরিক’ হিসেবে আদিবাসীদের বোঝানো হচ্ছিল যে, তাঁদের জন্য নাকি একটি মাত্র সরকার— ‘অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার’। সেই তথাকথিত মাঝি সরকারের ‘সদস্যপদ’ নিলেই নাকি আর এসআইআর ফর্ম পূরণ করার দরকার নেই। এ ভাবেই প্রতারণা চক্র লোক ঠকিয়ে টাকা তুলছিল বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে বাঁকুড়ার বারিকুল থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে দুই মাথাকে। এক জন বাঁকুড়ার বাসিন্দা, অপর জন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের বাসিন্দা।

জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার কিছু ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আদিবাসী মানুষদের বুঝিয়ে এসেছিলেন যে, এসআইআর প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেই নাকি ‘সরকার’ তাঁদের অধিকার কেড়ে নেবে। ফলে রানিবাঁধ, বান্দোয়ান সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা গণনা ফর্ম পূরণে অনীহা দেখাতে শুরু করেন। সরকারি আধিকারিকরা ফর্ম পূরণের গুরুত্ব বোঝাতে গেলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভও দেখানো হয়।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাঝি সরকারের নাম ব্যবহার করে ছত্তিশগড় থেকে এই চক্র পরিচালিত হলেও ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের একটি দল সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। প্রতারণার কৌশল ছিল সহজ, সদস্যপদ নিলে নাকি নাগরিকত্বের বাইরে থেকেও সব সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে। সারাদেশে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করা যাবে। আর এর বিনিময়ে মাথা পিছু তিন হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের বহু মানুষ ইতিমধ্যেই এই চক্রের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জঙ্গলমহলে এই প্রতারণা চক্রের আরও শাখা রয়েছে কি না, তা পুলিশের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

এদিকে এই প্রতারণা চক্রের হদিশ পেয়ে বারিকুল থানার পুলিশ ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার পূর্ণিয়া গ্রামে হানা দেয়। ওড়িশা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয় ভবেন্দ্র মারাণ্ডি নামে এক ব্যক্তিকে। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উঠে আসে চক্রের আরেক মাথা— বাঁকুড়ার রসপাল গ্রামের বাসিন্দা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রাক্তন নেতা সন্তোষ মাণ্ডির নাম। তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তাঁদের খাতড়া মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

এই প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে আদিবাসী সংগঠনগুলি। গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হন এবং কেন এসআইআর-এর গণনা ফর্ম পূরণ করা আবশ্যক, তা বোঝাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংগঠনগুলির দাবি, মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে শুরু করেছেন এবং এবার তাঁরা গণনা প্রক্রিয়ায় যোগ দেবেন।

এ প্রসঙ্গে আদিবাসী সমাজের নেতা ও স্থানীয় শিক্ষক মিলন মাণ্ডি বলেন, মাঝি সরকারের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে সহজ-সরল মানুষ ভুল করেছেন। এসআইআর ফর্ম পূরণ না করলে ভবিষ্যতে তাঁদের সমস্যা হতে পারে। প্রশাসনের উচিত গ্রামে গিয়ে মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়া।

অন্যদিকে, অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সম্পাদক সুনীল কুমার মাণ্ডির বলেন, এ শুধু আর্থিক প্রতারণা নয়, আদিবাসীদের নাগরিক অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার বড় চক্রান্ত। মানুষ দ্রুত ফর্ম পূরণ করে জমা দেবেন— এটাই সকলের আশা।

Advertisement