অভিষেকের নিশানায় মোদি, মমতার পাশে বাম-কংগ্রেস

এই গরিব কল্যাণ প্রকল্পে বাংলার নাম বাদ পড়ার কারণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এই মর্মে মমতার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী।

Written by SNS Kolkata | June 23, 2020 5:41 pm

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

লকডাউনের সময় রাজ্যের পরিযায়ীদের ঘরে ফেরানো নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য তরজা হয়েছিল। এবার পরিযায়ীদের জন্য গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান প্রকল্পে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না মেলা নিয়েও জমে উঠেছে বিতর্ক।

কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কর্মসংস্থান প্রকল্পে কেন বাংলার স্থান হল না? কেন বাংলার মানুষের প্রতি এই উদাসীনতা? এই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই ইস্যুতে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছেন বাম-কংগ্রেস।

এই গরিব কল্যাণ প্রকল্পে বাংলার নাম বাদ পড়ার কারণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এই মর্মে মমতার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। সোমেন মিত্র, আবদুল মান্নানের মতো রাজ্য কংগ্রেস নেতারাও বিজেপির এই বাংলাকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিজেপিকে দুষেছেন।

বামফ্রন্টের সাংসদ মহম্মদ সেলিম, পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এই প্রকল্পে পরিযায়ীজের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও তথ্যের খামতি থাকলে অবিলম্বে তা শুধরে নেওয়ার জন্য আবেদন রেখেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী।

লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। করোনার জেরে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে নিজভূমে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কাজ হারানো এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কাজের বন্দোবস্ত করতে ৫০ হাজার কোটি টাকার গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র।

গত ২০ জুন বিহারে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে মোট ছ’টি রাজ্য। এর মধ্যে তিনটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত।

ছ’টি রাজ্যের ১১৬ টি জেলায় যেখানে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, সেখানে ১২৫ দিনের মধ্যে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের বন্দোবস্ত করা হবে। কিন্তু এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়নি পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলারও নাম।

এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে সোমবার টুইট করলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি লিখেছেন, বাংলার প্রায় ১১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা বাড়ি ফিরে এসেছেন তাদের উদ্বেগের বিষয়টি উপেক্ষা করা হল। গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানে কেন পশ্চিমবঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হল না? অভিষেকের এই টুইট শেয়ার করে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়ানের প্রশ্ন এখন সংসদ অধিবেশনও নেই। তবে এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবেন?

গোটা বিষয়কে নিশানা করে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র কীভাবে জেলা বেছে নিচ্ছে, বোঝা গেল না। পঁচিশ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরে ফেরা যদি শর্ত হয়, তাহলে এই রাজ্যের অনেক এরকম জেলা আছে, যার নাম বলতে পারি। রাজ্যের সঙ্গে এরকম বৈষম্যমূলক আচরণ কেন্দ্রকে মানায় না।

কংগ্রেসের তরফে আব্দুল মান্নান বলেন, বিজেপি বাঙালি বিরোধী। তাই বাংলার নাম অন্তর্ভুক্ত করেনি প্রকল্পের সঙ্গে। আগামীকাল সর্বদল বৈঠকে তিনি নিজে না থাকতে পারলেও কংগ্রেসের তরফে থাকা প্রতিনিধি এই ইস্যুতে মমতার পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান।

সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন কেন্দ্র তো বাংলাকে বঞ্চনা করেছে বটেই। কিন্তু রাজ্যেরও দোষ আছে প্রতিটি জেলায় ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক ফিরেছে সেই তালিকা কেন কেন্দ্রকে দেয়নি রাজ্য?

এদিকে গরিব কল্যাণ যোজনা বাংলার বাদ পড়ার দায় রাজ্যের ওপরই চাপাতে চায় রাজ্য বিজেপি নেতা সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তিনি বলেন, রাজ্য তো পরিযায়ী শ্রমিকদের জেলাভিত্তিক কোনও তথ্যই এখনও তৈরি করতে পারেনি। কেন্দ্রকে দোষারোপ করার আগে নিজের মূল্যায়ন করা উচিত। তবে রাজ্য বিজেপি অপর নেতা একদা তৃণমূলী মুকুল রায় এদিন বলেছেন গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান প্রকল্প থেকে বাংলার বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা কলবেন।