সোনালী খাতুনের পাশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, খুব শীঘ্রই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ

বাংলা ভাষায় কথা বলায় দিল্লি পুলিশের দ্বারা গ্রেফতার, জোর করে পুশব্যাক এবং এরপর বাংলাদেশে দীর্ঘ আট মাসের শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার সোনালী খাতুন অবশেষে নিজের সন্তানের সঙ্গে দেশে ফিরলেন। এই প্রত্যাবর্তন শুধু এক অসহায় মায়ের বাড়ি ফেরা নয়—এটি কেন্দ্র সরকারের ‘বাংলা-বিরোধী’ মনোভাব এবং প্রশাসনিক নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধের বিজয়। এই সমগ্র মানবিক লড়াইয়ের প্রতিটি ধাপে পাশে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সোনালী খাতুন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। শুধু দেখা করাই নয়, সোনালীর চিকিৎসা, তাঁর পরিবারের আর্থিক সুরক্ষা এবং তাঁর সন্তানের শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কলকাতায় সাক্ষাতের সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি জানতে চাইবেন—বাংলাদেশে এবং তার আগেও দিল্লি পুলিশের হাতে ঠিক কী ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন তিনি, মানসিক নির্যাতনের গভীরতা কতটা ছিল এবং কোন পরিস্থিতিতে তাঁকে জোর করে সীমান্তে পাঠানো হয়েছিল।
মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দেশের মাটিতে ফিরে আবেগে ভেসে ওঠেন সোনালী। স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশে খুব কষ্টে ছিলাম। ভারতে ফিরে আসতে পেরে অভিষেক ব্যানার্জি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। দিল্লি পুলিশ আমাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করেছিল। বারবার অনুরোধ করার পরও বিএসএফ দিয়ে আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর কখনো দিল্লি যাব না।’’
জুন মাসে গ্রেফতার হওয়ার পর বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয় সোনালীকে—তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে ১০১ দিন বন্দী থাকা, ছ’মাসেরও বেশি সময় প্রবাসে নির্যাতনের জীবন—এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলা। সোনালীর ও তাঁর সন্তানের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল নেতৃত্ব আইনি লড়াই শুরু করে।
তৃণমূল নেতৃত্ব বারবার অভিযোগ করেছে—সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র কোনও তৎপরতা দেখায়নি। দুই দিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পর অবশেষে দলীয় আইনজীবীরা আদালতে পুনরায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। সেই উদ্যোগের ফলেই সোনালী ও তাঁর সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই এই লড়াইয়ের সামনের সারিতে ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন—একজন নিরপরাধ, দরিদ্র বাংলার মেয়ের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণ শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং বাংলার মানুষের প্রতি ঘৃণা ও বৈরিতার প্রতিফলন। তাঁর মতে, ‘‘যে দেশ তার নাগরিকের ভাষা, পরিচয়, দুর্বলতা বা দারিদ্র্যকে লক্ষ্য করে তাকে শাস্তি দেয়, সে দেশে গণতন্ত্রকে রক্ষা করা কঠিন।’’
গতকাল ইংলিশবাজারের মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার পরে সোনালীকে মালদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করানো হয় এবং শনিবার তিনি বীরভূমের বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।