রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

করোনার প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যে এ রাজ্যে সংখ্যাটি বেড়ে হল ৫। তবে এর আগে যে তিনজনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে তারা সবাই বিদেশ থেকে ফিরেছিলেন। শনিবার যাঁর দেহে করোনার সন্ধান মিলেছে তার কিন্তু বিদেশ যাওয়ার কোনও রেকর্ড নেই। দমদমের বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়ের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে। বর্তমানে তিনি সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ভর্তি রয়েছে। 

চলতি মাসের ১৬ তারিখ জ্বর এবং কাশি নিয়ে তিনি এই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। যদিও তিনি ১৩ তারিখ থেকে সর্দি ও জ্বরে ভুগছিলেন। ১৯ তারিখ তার প্রবল শ্বাসকষ্ট হওঙ্খয়ায় ভেন্টিলেশনে রাখার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে তার রক্ত এবং লালার নমুনা এসএসকেএম-এ পাঠানো হয়। সেখানেই তার শরীরে যে করোনাভাইরাস বাসা বেঁধেছে এ সম্বন্ধে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। রিপোর্ট আসে পজিটিভ। পরে শনিবার নমুনা পাঠানো হয়ে নাইসেডে। সেখান থেকেও পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। 

বিদেশ যাননি এই রোগী। ফলে কোথা থেকে করোনাভাইরাস এই প্রৌঢ়ের দেহে সংক্রামিত হল তা জানার চেষ্টা চলছে। তিনি অসুস্থ হওয়ার আগে কার কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, অন্য কোনও রাজ্যে গিয়েছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 


এদিকে, খবর পাওয়া গিয়েছে, রাজ্যে আরও এক আমলার ছেলেকে রাজারহাটে কোয়ারেন্টাইনের রাখা হয়েছে। আইপিএসের ছেলে, তিনি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। এই আইপিএস টালিগঞ্জ পুলিশ আবাসনে থাকেন। আমলার ছেলে আবাসনে আসায় প্রতিবেশীরা থানায় অভিযোগ করে। পুলিশ এই আইপিএসের ছেলেকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ক্রমশ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। 

পঞ্চসায়র, বালিগঞ্জের পর রাজ্যে তৃতীয় করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেল দক্ষিণ হাবড়ার স্বামীজি রোডে। সূত্রের খবর, আক্রান্ত এই তরুণী কিছুদিন আগে স্কটল্যান্ড থেকে ফিরেছে। শুক্রবার রাতে তার শরীরে করোনাভাইরাস থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই তরুণীকে নিয়ে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত মোট তিনজন। 

রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, ১৯ তারিখে দেশে ফিরেছে এই তরুণী। তরুণী পরিবারের তরফে জানা গেছে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএর ছাত্রী ছিল সে। স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই ছাত্রী। কিন্তু স্কটল্যান্ড থেকে সরাসরি ভারতে ফেরার কোনও বিমান না পাওয়ায় প্রথমে লন্ডন এবং সেখান থেকে ১৮ মার্চ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে চেপে লাহোর হয়ে মুম্বই পৌঁছয় তরুণীটি। মুম্বই থেকে বিমানে কলকাতায় পৌঁছনোর পর তাকে বিমানবন্দরে আনতে গিয়েছিলেন তার বাবা এবং ড্রাইভার। 

রাজ্যের অন্য দুই করোনা আক্রান্ত যুবকের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ উঠলেও করোনা আক্রান্ত তৃতীয় তরুণীর পরিবারের দাবি, প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলেন তারা। বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে কোনও সমস্যা না ধরা পড়ায় তরুণীকে গৃহন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু এই রাজ্যে ইংল্যান্ড ফেরত এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন। তাই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায় তরুণী। চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

এদিনই তার লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় নাইসেড়ে। শুক্রবার রাতেই নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায় তরুণীটি করোনাভাইরাস আক্রান্ত। এরপরই তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সম্পূর্ণ আলাদা একটি আইসোলেশন রুমে স্থানান্তরিত করা হয়। আপাতত সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার। 

তরুণীর বাবা, গাড়িচালক ও তার পরিবারকে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে ফেরার পর এই তরুণী তার বাবা ছাড়া অন্য কারও সংস্পর্শে এসেছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্ত তরুণের পরিবারকেও কোয়রান্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, যাঁরা বিদেশ থেকে দেশে ফিরছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে যাঁরা আসছেন, তারা যেন ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকেন। প্রয়োজনে স্থানীয় হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বার বার মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ সত্ত্বেও বিদেশ থেকে ফেরা বহু মানুষ বাইরে ঘোরাফেরা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশিষ্ট চিকিত্সক অমল হাজরা জানান, এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রধান হাতিয়ার হল সচেতনতা। সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হন, তাহলে এই রোগ মহামারীর আকার নিতে পারে। রোগ গোপন করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে বলেও জানান এই চিকিৎসক। 

এদিকে করোনা আক্রান্ত তরুণীর বাবা জানান, সমস্ত নিয়ম মানা সত্ত্বেও তাদের হেনস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তরুণীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠিয়ে তিনি নিজেকে আলাদা একটি ঘরেই রেখেছেন। কিন্তু তরুণী সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও তার গোটা পরিবার এবং তরুণীর বন্ধুকে আইসোলেশনে পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তরুণীর বাবা। 

পাশাপাশি গুজবের জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা তার পরিবারে উপরে চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানান তিনি। স্থানীয় পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছে, তরুণীটি বিমানবন্দর থেকে কোথাও গিয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে গুজবের জেরে যাতে তার পরিবারকে হেনস্থার শিকার হতে না হয়, তা নিশ্চিত করবে পুলিশ, এমনটাও আশ্বাস দেন তিনি।