• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

আরজি কর সংক্রান্ত পুলিশের তথ্যে নানান অসঙ্গতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

ডিসি সেন্ট্রাল যাঁকে ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁকে এসএসকেএম-এর পোস্ট গ্রাজুয়েট-এর প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে সনাক্ত করেছে আইএমএ

আরজি কর কান্ড নিয়ে ফের একের পর এক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে বিশেষজ্ঞদের চুলচেরা বিশ্লেষণে। সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিওতে সেমিনার রুমে একটি সবুজ চাদর রাখা আছে বলে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে (যদিও সেই ভিডিও-র সত্যতা যাঁচাই করেনি ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’)। সেখানে দেখানো হচ্ছে সেমিনার রুমে সবুজ চাদর রাখা আছে। অন্যদিকে ঘটনার দিন মৃতার বাবা-মা আরজি কর-এ গিয়ে তাঁদের প্রিয় সন্তানের দেহ সবুজ চাদর দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখেছিলেন বলে প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছেন। অথচ পুলিশের তরফ থেকে এই সবুজ চাদরের অস্তিত্বের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। ঘটনার পর এই চাদরের রং নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানান বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ার পর শুক্রবার পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সবুজ চাদরের কোনও অস্তিত্ব নেই। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, সবুজ চাদরের অস্তিত্ব যদি নাই থাকবে, তাহলে সেমিনার রুমে ওই সবুজ চাদর এলো কীভাবে?

শুধু তাই নয় শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া বিবৃতি নিয়ে একাধিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে অনেকেই অনেকরকম প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল, ঘটনার সময় সেমিনার রুমে একটি চিত্র তুলে ধরেন ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। ৯ আগস্ট দেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলের সেই ছবিতে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের তিনি চিহ্নিত করেছেন এবং প্রত্যেকের পরিচয় দিয়েছেন। ডিসি সেন্ট্রাল সেই ভিড়ের মধ্যে লাল শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে জানিয়েছিলেন, ‘ইনি ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ।’ সেই দাবি নস্যাৎ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (আইএমএ)। ডিসি সেন্ট্রাল যাঁকে ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁকে এসএসকেএম-এর পোস্ট গ্রাজুয়েট-এর প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে সনাক্ত করেছে আইএমএ। এব্যাপারে আইএমএ জানিয়েছে, এসএসকেএম-এর পোস্ট গ্রাজুয়েট-এর ওই পড়ুয়া চিকিৎসকের নাম অভীক দে।

Advertisement

আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ দাবি করেছে যে, ঘটনাস্থলে বহিরাগতদের প্রবেশের কোনও সুযোগ ছিল না। অথচ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একাধিক বহিরাগতকে। এমনকি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক নেতা বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে সেখানে দেখা গেল কীভাবে? তিনি ঘটনার দিন সেখানে কী করছিলেন? এই প্রশ্নগুলির এখনও কোনও সদর্থক সমাধান পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে এই বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে নিয়ে একটি বিতর্কিত অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস একজন পড়ুয়াকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন।

Advertisement

প্রশ্ন এখানেই শেষ নয়। মৃতদেহ প্রথমে নজরে আসা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেই তথ্য দেওয়া, পুলিশে খবর দেওয়া এবং এফআইআর-এ নথিভুক্ত করা সময় নিয়ে একাধিক বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

এদিকে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দেবাশীষ কর গুপ্ত এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীন বিবৃতি দিয়ে পুলিশের তথ্য প্রকাশ তদন্ত প্রক্রিয়াকে ফুটো করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু সিবিআই তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন, সেহেতু তাদের তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক তথ্য গোপন রাখতে হয়। যাতে কোনও তথ্যের লিকেজ না হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ যেভাবে তদন্ত প্রক্রিয়ার কিছু কিছু তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে, তাতে তদন্ত প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে একটি পরিচিত বাক্য হল- ‘এভরি লিকেজ ইজ আ লস ফর দ্য ইনভেস্টিগেশন টু অ্যারাইভ অ্যাট এ কারেক্ট অ্যান্ড পারফেক্ট কনক্লুসন।’ অর্থাৎ, তদন্তে কোনও ছিদ্র থাকলে, সঠিক কিনারায় পৌঁছতে বাধা আসে।

Advertisement