নিজস্ব প্রতিনিধি— শনিবার ভূপতিনগরে এনআইএ-র উপরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চর্চা তুঙ্গে৷ কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে শনিবারই নিজ সভা থেকে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এনআইএ-র তৎপরতা নিয়ে সরব হলেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ কুণালের স্পষ্ট অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বিজেপির নির্দেশে এবং স্থানীয় বিজেপির মদতে কাজ করছে এনআইএ৷ নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বুথ ফাঁকা করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘রেফারিকে ম্যানেজ করে মাঠে নামিয়ে ফাঁকা মাঠে খেলবে বিজেপি৷’’
সাংবাদিক বৈঠকে এনআইএ-র এসপি ধনরাম সিং-এর বাডি়র ভিজিটার বুকের কপি এবং ওই বাড়ির দলিল প্রমান হিসেবে দেখিয়ে কুণাল বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ভোট ঘোষণার পর ২৬ মার্চ ২০২৪ এনআইএ-র এসপি ধনরাম সিং-এর কলকাতার নিউটাউনের বাডি়তে যান বিজেপি নেতৃত্ব৷ তাঁরা লিস্ট দিয়ে দেন কোন কোন এলাকায় কাদের গ্রেফতার করতে হবে৷ সেই অনুযায়ী এনআইএ ঠিক করে যে তল্লাশি করে তৃণমূলের বুথ কর্মীদের তুলে আনবে৷ ২৬ মার্চ ৬.৩০ নাগাদ এনআইএ -র এসপি ধনরাম সিং-এর নিউটাউনের বাডি়তে পৌঁছন জিতেন্দ্র তিওয়ারি৷ ৭টা ২২ মিনিট পর্যন্ত ছিলেন সেখানেই৷ ওই বাডি়র দলিল লিজে নেওয়া৷ সেখানে মালিকের সঙ্গে বাডি়র বাসিন্দা হিসাবে সই করছেন তিনি ধনরাম সিং৷ স্পষ্টভাবে অভিযোগ করছি, একটি সাদা প্যাকেটে প্রচুর অর্থের লেনদেন হয়েছে৷ অবিলম্বে ধনরাম সিং-এর বিরুদ্ধে তদন্ত হোক৷’’
Advertisement
এক্ষেত্রে কুণাল প্রশ্ন তুলেছেন, আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন কেন বিজেপি নেতৃত্বদের দেখা করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের সাথে? যদি প্রয়োজনে দেখা করতেই হয় তাহলে অফিসে না দেখা করে কেন বাড়িতে যেতে হলো? এমন একাধিক প্রশ্নের জট বেঁধে রয়েছে৷ কুণালের ভাষায়, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হলে তার তদন্ত করা হয়না৷ বাংলায় একটি দুর্ঘটনা ঘটলেই তার পেছনে রাজনৈতিক কারণ খুঁজে তৃণমূলের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এই সম্পূর্ণ ঘটনার তদন্তের দাবি করছেন কুণাল তথা তৃণমূল নেতৃত্বরা৷ এ প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘অবিলম্বে রাজ্য সরকার ধনরাম সিং-এর বিরুদ্ধে এফআইআর করুক৷ তদন্ত হোক৷ দুই ব্যক্তিরই ওই সময়ের মোবাইল লোকেশন খতিয়ে দেখা হোক৷ এতবড় দুর্নীতি প্রমাণিত হলে গ্রেফতার করা হোক৷ নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে ধনরাম সিং কে বাংলা থেকে বহিস্কার করুক৷’’ এনআইএ ছাড়াও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থার সাথে বিজেপির গোপন আলাপচারিতা চলেছে, দাবি কুণালের৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘চৈত্র মাস চলছে এনআইএ টা দিলাম৷ বৈশাখ পড়বে আরেকটা এজেন্সির আরো দুই অফিসারের গল্প সামনে আনবো৷’’
Advertisement
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ঘটে যাওয়া এই ভূপতিনগর ঘটনার তদন্ত করতে এতো কালবিলম্ব হলো কেন এবং চব্বিশের নির্বাচনের আগেই বা তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো কেন সেই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক থেকে প্রশ্ন তুলেছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এটি তদন্ত নাকি তৃণমূল নেতা, কর্মীদের বিব্রত করা এবং গ্রামে আতঙ্ক তৈরি করার পদ্ধতি?’’ তিনি বলেন, অভিযুক্তরা যে হাজিরা এড়িয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে আগে কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? ভোর ৪ টের সময় স্থানীয় থানায় না জানিয়ে কোনো মহিলা আধিকারিকদের না নিয়েই গ্রামে চলে গেলো এনআইএ৷ এনআইএ-র আধিকারিকরা মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন তাই তারা যোগ্য জবাব দিয়েছেন৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তিনবার ডিজি পরিবর্তিত হয়েছে তাহলে এইক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে না? নির্বাচনের মুখে একজন এনআইএ আধিকারিকের সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টা ধরে কি আলোচনা করছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব? কোর্টের আদেশকে মান্যতা দিয়ে তদন্তে নামেনি এনআইএ, বরং এটি সাজানো চক্রান্ত ছিল৷ এই সম্পূর্ণ ঘটনার বিরুদ্ধে এবং এর বিচার চেয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবেন তৃণমূলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল, এটিও স্পষ্ট করে বলেন চন্দ্রিমা৷
Advertisement



