চলতি বছরের মে মাসে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে ভারতের কৌশলগত ও নিখুঁত হামলার প্রভাব অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিল ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার বছরের শেষ সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ভারতের হামলায় রাওয়ালপিন্ডির চাকালা এলাকায় অবস্থিত নুর খান বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানে কর্মরত সামরিক কর্মীদের একাংশ আহত হয়েছেন।
ইসহাক দার স্বীকার করেছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের তরফে একাধিক মানববিহীন উড়ানযান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল। তাঁর দাবি, ‘ভারত পাকিস্তানের দিকে মানববিহীন উড়ানযান পাঠায়। মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৮০টি উড়ানযান পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৯টিকে প্রতিহত করা সম্ভব হলেও একটি উড়ানযান সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে এবং তাতে কর্মীরা আহত হন।’ এই মন্তব্যের মধ্য দিয়েই তিনি কার্যত নুর খান বিমানঘাঁটিতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
Advertisement
মে মাসের ওই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দার জানান, ৯ মে রাতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তানের অসামরিক ও সামরিক শীর্ষ নেতৃত্ব একটি জরুরি বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তাঁর আরও দাবি, ১০ মে ভোররাতে নুর খান বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ভারত ‘ভুল করেছে’। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন যে, ভারতের সামরিক আঘাতে ঘাঁটিটির ক্ষতি হয়েছিল।
Advertisement
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দারের এই মন্তব্য পাকিস্তানের তরফে মে মাসে ভারতের কৌশলগত সামরিক অভিযানের একটি স্পষ্ট স্বীকৃতি। এর আগে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এলাকায় মোট নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। ৭ মে ভোররাতে শুরু হওয়া এই অভিযানটি ছিল ২২ এপ্রিল পহেলগামে হওয়া জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাত।
এই অভিযানের পর দু’দেশের মধ্যে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের তরফে সীমান্তে গোলাবর্ষণ বাড়ে, তার পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় সেনা বাহিনীও। পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের প্রধান ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দেন। পরে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, স্থল, জল ও আকাশপথে সব ধরনের সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখার বিষয়ে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে।
এই ঘটনার পর ১৩ মে প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্র পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আরও স্পষ্ট করে দেয়। ওই চিত্রে দেখা যায়, নুর খান বিমানঘাঁটি ছাড়াও সারগোধার মুশাফ ঘাঁটি, ভোলারি বিমানঘাঁটি এবং জ্যাকোবাবাদের শাহবাজ ঘাঁটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ২৫ এপ্রিল ও ১০ মে তোলা তুলনামূলক উপগ্রহ চিত্রে নুর খান বিমানঘাঁটির পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্বীকারোক্তি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারের তথ্য গোপনের প্রবণতা নিয়েও দেশটির অন্দরে প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে।
Advertisement



