ঋণ, দারিদ্র এবং অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা পাকিস্তানের সামনে এবার আরও এক গভীর সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দেশের ভিতরে রাজনৈতিক হানাহানি ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে খাইবারপাখতুনা সীমান্তে একের পর এক হামলা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই অস্থির অবস্থার মধ্যেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পাকিস্তান থেকে মেধাবীদের দেশত্যাগের প্রবণতা, যাকে ঘিরে ‘ব্রেন ড্রেন’ নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এই পরিস্থিতিকে ‘ব্রেন ড্রেন নয়, বরং ব্রেন গেন’ বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁদের দাবি, বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় পাকিস্তান এক ভয়ঙ্কর মেধা সংকটের দিকে এগোচ্ছে।
Advertisement
পাকিস্তানের নাগরিকদের দেশত্যাগ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান পরিস্থিতির গভীরতা স্পষ্ট করছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মাসে প্রায় ৫ হাজার ডাক্তার, ১১ হাজার ইঞ্জিনিয়ার এবং ১৩ হাজার অ্যাকাউন্ট্যান্ট দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের প্রশাসনের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালে মোট ৭ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৮১ জন নাগরিক বিদেশে কাজ করতে গিয়েছিলেন। চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার ২৪৬ জনে। শাহবাজ শরিফ সরকারের আমলে দেশ যে কতটা বড় সংকটের মুখে পড়েছে, এই পরিসংখ্যান তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
Advertisement
এই পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন প্রাক্তন পাক সেনেটর মুস্তাফা নওয়াজ খোখারও। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘অর্থনীতিকে শোধরাতে হলে আগে রাজনীতিকে শোধরাতে হবে।’ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, পাকিস্তান বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং কেন্দ্র হলেও বারবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির প্রায় ১.৬২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর জেরে প্রায় ২৩ লক্ষ ৭০ হাজার ফ্রিল্যান্স কর্মী কাজ হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, প্রতি বছর হজের সময় পাকিস্তানের এক বিরাট অংশের মানুষ সৌদি আরব কিংবা অন্য দেশে চলে যান মূলত ভিক্ষাবৃত্তি বা অস্থায়ী মজুরির সন্ধানে। সাধারণত এই প্রবণতা শ্রমিক বা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগের বিষয় হল, পাকিস্তানে এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মতো উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীরাও আর দেশে থাকতে চাইছেন না।
এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আরও গাঢ় অন্ধকারের দিকে এগোবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। মেধা পাচারের এই স্রোত থামাতে দ্রুত কার্যকর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার না হলে পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ হবে, সে বিষয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement



