• facebook
  • twitter
Sunday, 21 December, 2025

সূর্য পূর্ব দিকেই ওঠে— তা জানতে সংবিধানের অনুমোদন লাগে কি?

‘ভারত হিন্দু রাষ্ট্র’ মন্তব্যে বিতর্ক উসকে দিলেন মোহন ভাগবত

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক প্রধান মোহন ভাগবত। ছবি: এএনআই

‘সূর্য যে পূর্ব দিকেই ওঠে, তা জানতে কি সংবিধানের অনুমোদন দরকার?’— এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর স্পষ্ট মন্তব্য, ‘ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্র’। আর এই পরিচয় কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার স্বাভাবিক সত্য— এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।

নাগপুরে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোহন ভাগবত বলেন, ‘কিছু সত্য আছে, যেগুলো মানতে কোনও আইনি অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। সূর্য যেমন পূর্ব দিকে ওঠে, তেমনই ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্র— এটি বাস্তবতা।’ তাঁর কথায়, হিন্দুত্ব কোনও উপাসনাপদ্ধতি বা নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচারমাত্র নয়, বরং এক জীবনদর্শন, যেখানে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

আরএসএস প্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘হিন্দু’ শব্দটি বিভাজনের জন্য নয়, বরং এই ভূখণ্ডে সহাবস্থান, সহনশীলতা ও বহুত্ববাদের ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করে। তিনি বলেন, ‘এই দেশে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের সকলের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও মতের জায়গা রয়েছে। হিন্দু রাষ্ট্র মানে কাউকে বাদ দেওয়া নয়।’

Advertisement

তবে ভাগবতের এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধী দলগুলির দাবি, সংবিধানে ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তাঁদের মতে, এই ধরনের বক্তব্য সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থী।

অন্য দিকে, আরএসএস ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, মোহন ভাগবত কোনও আইনি কাঠামোর কথা বলেননি। তিনি কেবল ভারতের সভ্যতাগত পরিচয়ের কথাই তুলে ধরেছেন। তাঁদের দাবি, ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ মানে রাষ্ট্রীয় বৈষম্য নয়, বরং সকল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনী আবহে এই ধরনের মন্তব্য নতুন করে আদর্শিক বিতর্ককে উসকে দিচ্ছে। সংবিধান, রাষ্ট্রের চরিত্র ও সাংস্কৃতিক পরিচয়— এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আগামী দিনে আলোচনা আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই— মোহন ভাগবতের ‘সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে’ উপমা কি কেবল দর্শনের কথা, না কি তা দেশের রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল? সেই উত্তর খুঁজতেই এখন মুখিয়ে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement