• facebook
  • twitter
Tuesday, 16 December, 2025

মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে পশ্চিমবঙ্গের খসড়া তালিকা

সোমবার থেকেই নাম দেখা যাচ্ছে বিএলও অ্যাপে

প্রতীকী চিত্র

মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে পশ্চিমবঙ্গের খসড়া তালিকা।  ওই দিন ১২টা নাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া কমিশনের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত না হলেও ইতিমধ্যে বিএলও অ্যাপে সেই খসড়া তালিকা দেখা যাচ্ছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। সংশ্লিষ্ট বুথ ধরে ধরে ভোটারদের নামের তালিকা দেখা যাবে সেখানে। প্রথমে ঠিক ছিল ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে খসড়া তালিকা। পরে তা পিছিয়ে ১৬ ডিসেম্বর করা হয়। যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নাম থাকবে এই তালিকায়।

স্থানীয় বুথ, পঞ্চায়েত অফিস, পুরসভা অফিস, মহকুমা শাসকের দপ্তর এবং জেলাশাসকের দপ্তরে খসড়া ভোটার তালিকা দেখা যাবে বলে জানিয়েছে কমিশন। অনলাইনেও দেখা যাবে খসড়া ভোটার তালিকা। ডিইও ওয়েবসাইট, সিইও ওয়েবসাইটেও ওই তালিকা দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়া ইসিআইনেট ওয়েবসাইটে দেখা যাবে এসআইআর-এর খসড়া ভোটার তালিকা। ‘এসআইআর ফাইনাল পাবলিকেশন ২০২৫’-এর সেকশনে গিয়ে ‘সার্চ ইওর নেম ইন ড্রাফট রোল’-এ গিয়ে ক্লিক করে কোনও ব্যক্তিকে তাঁর রাজ্যের নাম ও এপিক নম্বর দিতে হবে। আর তার পরেই তিনি তাঁর নাম খসড়া ভোটার তালিকায় দেখতে পাবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

কমিশন আরও একটি তালিকা প্রকাশ করবে, তাতে ম্যাপিং-এ হদিশ না মেলা ভোটারদের সংখ্যা থাকবে। কমিশন অনুযায়ী যাঁরা মৃত, ভুয়ো, স্থানান্তরিত ও অনুপস্থিত বলে চিহ্নিত, তাঁদের নাম থাকবে সেই তালিকায়। কমিশন সূত্রে খবর, ওই তালিকা রাজ্যের প্রত্যেকটি বুথের বাইরে বিএলও ও বিএলএ-২-দের উপস্থিতিতে সোমবারই টাঙিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া, বুথ ভিত্তিক, বিধানসভা ভিত্তিক ও জেলা ভিত্তিক ওই তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিইও ও রাজ্যের সিইও ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে।

Advertisement

কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, ফর্মে গরমিলের জন্য ১ কোটি ৯০ লক্ষ ভোটারের কাছে নোটিস পাঠানো হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আনম্যাপড ৩০ লক্ষও। এঁদের শুনানির জন্য ডেকে নথি দেখতে চাওয়া হবে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নাম নেই বা সেই ভোটার তালিকায় বাবা, মা, দাদু, দিদা বা পরিবারের কারও নাম নেই, এমন ২৪ লক্ষ ২১ হাজার ১৩৩ জনকে শুনানিতে ডাকা হতে পারে। যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি এমন ২০ লক্ষ ৭৪ হাজার ২৫৬ জনকেও নোটিস দিয়ে ডাকা হবে।

বাবার নামে অসঙ্গতি রয়েছে এমন ৮৫ লক্ষ ১ হাজার ৪৮৬ জনকে ডাকা হতে পারে শুনানিতে। আবার বাবার বয়স নিয়ে ধন্দ রয়েছে এমন ভোটারের সংখ্যাও প্রায় ২০ লক্ষ। তাঁরাও নোটিস পেতে পারেন। ১১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৩০ জন ভোটারের ক্ষেত্রে বাবার সঙ্গে বয়সের ফারাক মাত্র ১৫ বছর। একইভাবে বাবার সঙ্গে বয়সের ফারাক ৫০ বছর এমন ভোটারের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৩৬। এছাড়াও ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ১৫২ জনের ক্ষেত্রে ভোটার লিস্টে ঠাকুরদার সঙ্গে বয়সে গোলমাল রয়েছে। একইভাবে ১৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯১৮ জন  ভোটারের ক্ষেত্রে লিঙ্গ সংক্রান্ত ভুল তথ্য রয়েছে।

হেয়ারিংয়ে ডাকা মানেই নাম বাদ পড়বে এমন কোনও বিষয় নয় বেল জানিয়েছে কমিশন। যাঁদের ডাকা হচ্ছে তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। তবে যাঁদের নথি সংক্রান্ত সমস্যা থাকবে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় নথি দাখিল করতে পারবেন না তাঁদের নাম বাদ যাবে।  গত ২৭ অক্টোবর বাংলা-সহ ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিক অঞ্চলে এসআইআরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল মুখ্য নির্বাচন কমিশন। তখন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ভোটার ছিল ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯।

কমিশন সূত্রে খবর, মোট ভোটারের নামে এনুমারেশন ফর্ম ছাপানো হয়েছিল। তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই ফর্ম নিয়ে গিয়েছিলেন বিএলও-রা। খসড়া তালিকায় নাম না থাকলে নতুন করে নাম তোলার জন্যে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। এজন্য ফর্ম ৬ পূরণ করে অ্যানেক্স-৬  এর সঙ্গে জমা করতে হবে। এছাড়াও বুথ লেভেল আধিকারিকের কাছে বা অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে।

তৃণমূলের তরফে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দলের নেতা-মন্ত্রী, বিধায়কদের নিজ নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন সেদিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ জনপ্রতিনিধিদের।  সেই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে  উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির  জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে বলবে কমিশন। তার সমাধান কীভাব সম্ভব সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের।

মুখ্যমন্ত্রী সোমবার গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন নবান্নে। সেই বৈঠক সেরে রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্যরা নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন। শুধু নেতা-মন্ত্রীরাই নন, বিধায়কদেরও এই খসড়া ভোটার তালিকার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতী সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি, এসআইআরকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় যাঁদেরকে পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদেরকেও সেই সব জেলার সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা স্থির করে দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। সে কারণে আগামী কয়েকদিন নিজ নিজ বিধানসভা এলাকায় ঘাঁটি গাড়বেন শাসক দলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা।

Advertisement