• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

তথ্য বিকৃতির দায় আদানিদের

আরএসএফ চিহ্নিত করেছে, গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গ্রুপ এবং হিন্দুত্ববাদী প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়াকে প্রেস স্বাধীনতার শিকারি হিসাবে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৫১। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে আরএসএফ গত মাসে প্রকাশ করেছে ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটরস’ তালিকা। সেখানে দুই ভারতীয় সংস্থার নাম উঠে এসেছে।

এই ‘প্রিডেটরস’ তালিকায় এমন ব্যক্তি, সংগঠন, কর্পোরেশন ও সরকারকে রাখা হয় যারা সাংবাদিককে খুন, সেন্সর, কারাবন্দি বা আক্রমণ করে, সংবাদমাধ্যমকে দমিয়ে রাখে, সাংবাদিকতার ভাবমূর্তি নষ্ট করে, অথবা প্রচার যুদ্ধের উদ্দেশ্যে তথ্যকে বিকৃত করে।

Advertisement

আরএসএফ চিহ্নিত করেছে, গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গ্রুপ এবং হিন্দুত্ববাদী প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়াকে প্রেস স্বাধীনতার শিকারি হিসাবে।

Advertisement

বিশ্ব তালিকায় রয়েছে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর আমলে প্রায় ২২০ জন সাংবাদিক নিহতের অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় আরও আছে বার্মার স্টেট পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি কমিশন, ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওয়ের নেতৃত্বাধীন বুরকিনা ফাসের সামরিক সরকার ও সাংবাদিকদের তাড়া করতে সোশাল মিডিয়া ‘এক্স’ ব্যবহারকারী কোটিপতি ইলন মাস্কও।
আরএসএফ জানাচ্ছে, দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী আদানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সংস্থাটি বলছে, ২০১৭ সাল থেকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে স্তব্ধ করতে আদানি গ্রুপ ও তার বিভিন্ন অধীনস্ত সংস্থা অন্তত ১০টি আইনি ব্যবস্থা নিয়্ছে ১৫ জনেরও বেশি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ‘গ্যাগ স্যুট’ বা কণ্ঠবিরোধী মামলার মাধ্যমে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মানহানির মামলা একসঙ্গে ব্যবহার করা হয় এই মামলাগুলিতে।

২০২৫ সালের ‘হিট লিস্ট’-এ রয়েছে আট সাংবাদিক ও তিনটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি গ্যাগ স্যুট, যেখানে আদালত একতরফা নির্দেশে আদানিকে নিজেই ঠিক করতে দিয়েছে কোন কনটেন্ট ‘মানহানিকর’। এমনকি অজ্ঞাত তৃতীয় পক্ষের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ প্রযোজ্য করা হয়েছে, যা ‘অসীম সেন্সরশিপের ঝুঁকি’ তৈরি করেছে।

এরপরেই ওয়্যার, নিউজলন্ড্রি, এইচডব্লু নিউজ এবং স্বাধীন সাংবাদিক রবিশ কুমার সহ বেশকিছু প্ল্যাটফর্মকে টেকডাউন নোটিশ দেওয়া হয়। আরএসএফের মতে, আদানির ‘মারাত্মক অস্ত্র’ হলো গ্যাগ স্যুটের দুশ্চক্র।

অন্যদিকে, ‘অপইন্ডিয়া’র ‘মারণাস্ত্রী হিসাবে আরএসএফ চিহ্নিত করেছে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ব্যবহার। আরএসএফ বলেছে, ২০২৫ সালে প্রেস স্বাধীনতার শিকারিদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য প্রযুক্তির আরও আগ্রাসী ব্যবহার— আর সেই উদাহরণ হিসাবেই অপইন্ডিয়ার নাম।

আরএসএফের ভাষায়, ‘হিন্দুত্ববাদী ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়া সরকার-সমালোচক সাংবাদিকদের ওপর বারবার হামলার জন্য কুখ্যাত। নিজেদের কনটেন্টকে তারা তুলে ধরে একটি তথাকথিত ‘লিবারেল মিডিয়া কার্টেল’-এর বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। ট্রোল নেটওয়ার্কের সাহায্যে তারা এমন বয়ান ছড়ায়, যা সমালোচক সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অপদস্ত করে— প্রায়ই তাদের ‘জর্জ সোরোস নেটওয়ার্ক’ বা ‘অ্যান্টি ইন্ডিয়ান লবি’র অংশ বলে দাগিয়ে দেয়।’

২০২৫ সালের হিট লিস্ট-এ রয়েছে সাংবাদিক ও মিডিয়াকে লক্ষ্য করে ৯৬টি কনটেন্ট, ২০০ পৃষ্ঠার এক ‘রিপোর্ট’, যা ষড়যন্ত্র তত্ত্বভিত্তিক এবং দাবি করে যে সাংবাদিকদের একটি নেটওয়ার্ক মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ন্যারেটিভ ওয়ার’ চালাচ্ছে এবং ভারত সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে। এইসব প্রতিবেদনের পর সাধারণত সমন্বিত অনলাইন হয়রানি শুরু হয়।

আরএসএফ জানিয়েছে, গত ২৩ অক্টোবর তাদের ইমপ্যাক্ট পুরস্কারের মনোনয়ন ঘোষণার পর স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউজ মিনিট’-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ধন্যা রাজেন্দ্রনকে লক্ষ্য করে অপইন্ডিয়ায় মানহানিকর কনটেন্ট প্রকাশ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশ্রয়ে আদানি গোষ্ঠী এইভাবে নানা কায়দায় সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও এখনও কিছু নির্ভয়চেতা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক রয়েছেন, যাঁরা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটিকে অক্ষত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় সংবিধান সেক্ষেত্রে আসল রক্ষাকবচ।

Advertisement