• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন যৌন সহিংসতার শিকার: হু

আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উঠে আসছে ভয়ঙ্কর চিত্র

প্রতীকী চিত্র

নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যে আজও বিশ্বের অন্যতম একটি মানবাধিকার সঙ্কট, আন্তর্জাতিক স্তরের এক বিস্তারিত সমীক্ষায় ফের তা প্রমাণিত হল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রকাশিত এই নতুন রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীতে প্রতি তিনজন মহিলার মধ্যে একজন জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বা অন্য কারও দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত দুই দশক ধরে কার্যত এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি খুবই নগণ্য।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী আনুমানিক ৮৪০ মিলিয়ন নারী জীবনের কোনও সময়ে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। শুধু গত ১২ মাসেই শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে অন্তত ৩১৬ মিলিয়ন বিবাহিত মহিলাকে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর সহিংসতা কমার হার মাত্র ০.২ শতাংশ— যা  খুবই উদ্বেগজনক।

Advertisement

হু-র ডিরেক্টর–জেনারেল ড. টেড্রোস অ্যাডানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, ‘মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মানবতার অন্যতম পুরনো ও বৃহত্তম অন্যায়। তবুও এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোনও সমাজ কখনও নিরপেক্ষ, নিরাপদ বা সুস্থ বলতে পারে না, যদি তার অর্ধেক নাগরিক ভয় নিয়ে প্রতিদিন বাঁচতে বাধ্য হন।’ তাঁর কথায়, ‘সম্মান, সমতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের নিরাপত্তা বাধ্যতামূলক।’

Advertisement

রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের ২৫.৮ শতাংশ জীবনে অন্তত একবার তাদের স্বামী বা পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সংখ্যাটি ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ক্ষেত্রে প্রায় ২৪.৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৬৮২ মিলিয়ন মহিলা এই যন্ত্রণার শিকার।

একই সময়ে জীবনসঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন অন্তত ২৬৩ মিলিয়ন মেয়েরা। বিশেষত টিনএজ মেয়েদের উপর নির্যাতনের হার আশঙ্কাজনক। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১৬ শতাংশ কিশোরী গত এক বছরে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আবার বয়স্ক মহিলারাও সুরক্ষিত নন। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সঙ্গীযুক্ত মহিলাদের পাঁচজনের মধ্যে একজন জীবনে কখনও না কখনও সঙ্গীর সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, সহিংসতার ফলে ‘অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের ঝুঁকি’, ‘যৌনবাহিত রোগ’, ‘গভীর মানসিক অবসাদ’ এবং বিভিন্ন শারীরিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে। আক্রান্তদের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবাকে আরও সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তাও এই রিপোর্টে জোর দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই যৌথ গবেষণা ১৬৮টি দেশের দুই দশকের তথ্য যাচাই করে করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কম উন্নত ও সংঘাত–আক্রান্ত অঞ্চল, জলবায়ু অবহেলিত ভূখণ্ডে নারীর উপর সহিংসতা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ওশিয়ানিয়ায় সহিংসতার হার বিশ্বের গড়ের তিনগুণ।

তবুও আন্তর্জাতিক স্তরে আর্থিক স্বাধীনতার চিত্রও হতাশাজনক। ২০২২ সালে নারীর নিরাপত্তা–সংক্রান্ত প্রতিরোধমূলক প্রকল্পে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তার মাত্র ০.২ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছিল। আর ২০২৫ সালে সেই বরাদ্দ আরও কমে গিয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতেও নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সমাজ ও প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া এই নিষ্ঠুরতা থামানো সম্ভব নয়। রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোনও উন্নয়নই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না।’

Advertisement