অতনু রায়
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শেষ। আন্তর্জাতিকতা থেকে আবার বাংলা গৃহযুদ্ধে সামিল। ইন্ডাস্ট্রি তোলপাড়, ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ নামে একটি ছবি যা শুক্রবার মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, তা আটকে দেওয়া হয়েছে। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্র জয়ব্রত দাস এই ছবির পরিচালক। ছবির টিমের প্রশ্ন, ছাত্রদের নিয়ে বানানো, স্টুডেন্ট ফিল্ম বা প্রজেক্ট ফিল্মকে কেন এভাবে আটকে দেওয়া হবে? এও কথা উঠেছে, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইম্পা)-র তরফ থেকে নাকি টাকা চাওয়া হয়েছে মিটমাট করতে। অন্যায় ভাবে শিল্পের কন্ঠরোধ সবসময়ই সমাজের পক্ষে ‘নেগেটিভ’ বার্তা বয়ে আনে। কেন এ ধরনের অভিযোগ উঠে আসছে জানতে যোগাযোগ করা হয় ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে প্রথমবার মুখ খুললেন ফেডারেশন সভাপতি।
Advertisement
স্বরূপ বলছেন, “আমি শুরুতে একটা সংজ্ঞা ইংরেজিতে বলি: ‘A student film or diploma film is typically a project created by filmmaking students enrolled in film schools. It is to provide the students hands-on experience in filmmaking. These are usually made on a smaller scale, often with limited budgets, resources, and crew. Diploma films are usually screened within academic settings, film festivals focusing on student works, and sometimes at local or national film festivals. They may not have wide distribution or commercial release.’ এবারে, এখন সব আলোচনা দেখে আমার মনে হচ্ছে, স্টুডেন্ট ফিল্ম আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মের সংজ্ঞাটাকে মানুষের কাছে গুলিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা কাজ করছে। আমি ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি। স্টুডেন্ট ফিল্ম বা প্রজেক্ট ফিল্ম বা ডিপ্লোমা ফিল্ম বলতে যেটা বুঝি যে সেটা কোনো ফিল্ম স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেরা বানাবেন। একদম হাতে-কলমে কাজটার অভিজ্ঞতা দেওয়া মূল উদ্দেশ্য। যারা ফিল্মমেকিং পড়ছেন তারা প্রজেক্ট হিসেবে ফিল্মই বানাবেন, খুব স্বাভাবিক। এগুলো খুব কম বাজেটে, ছোট স্কেলে হয়। সাধারণত এই ছবিগুলো বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পাঠায় পড়ুয়ারা আর ইন্সটিটিউটের সেটআপে সাধারণত দেখানো হয়। সেই সব ছবি বড় করে ডিস্ট্রিবিউট করে কমার্শিয়াল রিলিজ হয় না। আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম হল যখন স্টুডিওর বাইরে গিয়ে একজন পরিচালক নিজে অর্থ সংগ্রহ করে একটা ছবি বানান। উদ্দেশ্য ছবির সম্পূর্ণ ক্রিয়েটিভ কন্ট্রোল নিজের হাতে রাখা। তারা রিলিজও করান কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আমরা দেখি খুব কম সংখ্যক স্ক্রিন নিয়ে।’
Advertisement
কিন্তু, এই ছবিও তো ছাত্ররাই করেছেন! এ প্রসঙ্গে স্বরূপ স্পষ্ট কথায় বলছেন, ‘আমার এই নিয়ে কোন বক্তব্য বা অভিযোগ তো নেই যে ছবিটা স্টুডেন্টরা করেছে! আমার বক্তব্য, ছবি মুক্তির সময় এসে দেখা যাচ্ছে যে তারা পিভিআর-আইনক্স-এর মাধ্যমে রিলিজ করাতে চাইছেন, ইউএফও, কিউবের খরচ এবং আরো বিভিন্ন টেকনিক্যাল খরচা ধরলে রিলিজের সময়ে সবমিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ করছেন। এরপরে ছবি স্যাটেলাইট বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিক্রিও হবে। আর সবথেকে বড় কথা পোস্টার থেকে সেন্সর সার্টিফিকেট সমস্ত জায়গায় প্রযোজক হিসেবে নাম রয়েছে প্রতীক চক্রবর্তী ও প্রমোদ ফিল্মসের। এই প্রযোজনা সংস্থা যখন যুক্ত হয়ে যাচ্ছে তখন কি সেটা স্টুডেন্ট ফিল্ম বা ডিপ্লোমা ফিল্ম থাকছে? এইটা আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। আমার যতটুকু জানা, তাতে মনে হয় সেটা থাকছে না। তাই যতক্ষণ না এই বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি দেখছি আমার টেকনিশিয়ানদের স্বার্থের জায়গাটা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেটা সভাপতি হিসেবে আমি কী করে করতে পারি? টেকনিশিয়ানদের কাছে জবাবদিহি তো আমাকেই করতে হয়। তাদের জবাবদিহি করার জন্য জবাবটা যদি আমি ছবির পরিচালক এবং প্রযোজকের কাছ থেকে পেয়ে যাই, তাহলেই আমার আর কোনও অসুবিধা থাকবে না।’
ইম্পার তরফ থেকে টাকা চাওয়ার প্রসঙ্গে ইম্পা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত বলেন, ‘ছবির টিম থেকে আমাকে জানানো হল যে ইম্পা-তে যে ছবি রেজিস্ট্রেশন করতে হয় সেটা তাঁরা জানেন না। কিন্তু খুব আশ্চর্যের ব্যাপার, সেইটা যে মুম্বই থেকে রেজিস্ট্রেশন করা যায় সেটা তাঁরা জানেন। তাঁরা মুম্বই থেকে রেজিস্ট্রেশন করলেন এমনকি ছবির সেন্সর পর্যন্ত মুম্বই থেকে করলেন। সেন্সর সার্টিফিকেটে দেখছি যে পরিষ্কারভাবে নাম দেওয়া রয়েছে প্রতীক চক্রবর্তী এবং প্রমোদ ফিল্মস। আমার এটা নিয়ে অসুবিধা। যখন প্রযোজনা সংস্থা যুক্ত তবে কেন স্টুডেন্ট ফিল্ম বা প্রজেক্ট ফিল্ম বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এইটা আমার প্রশ্ন তাদের কাছে। আমি যদি আজকে প্রশ্নটা না তুলি তবে অন্যরা আঙুল তুলবে। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের কী অপরাধ ছিল তবে? সে কালকে এসে আমার কাছে প্রশ্ন তুলবে যে কীভাবে একই কাজ করে আরেকজন ছাড়া পেয়ে গেল। তাকে আমি কী জবাব দেব? সেই জায়গা থেকেই আমার বক্তব্য। আর মোটেই ইম্পা টাকা চায়নি। যেটা চাওয়া হয়েছে সেটা যে তারা কলকাতায় দুদিন শুট করেছেন ‘হ্যাশট্যাগে’, সেই হিসেবে আট লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। তাতে অন্ততপক্ষে টেকনিশিয়ানদের যে বঞ্চিত করা হয়েছে তার কিছুটা ক্ষতিপূরণ হবে।’
খবর, ছবির পরিচালক জয়ব্রত দাস এবং আরও দুজন ইম্পা সভাপতির সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করেছেন। শুক্রবার বিকেলে পরিচালক জয়ব্রত দাস ছবির অভিনেতা সৌরভ দাস এবং আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের কাছে আলোচনার জন্য যান। সূত্রের খবর, ফেডারেশন সভাপতির প্রশ্নের মুখে জয়ব্রত কার্যত অসহায় হয়ে পড়েন এবং স্বীকার করে নেন যে তাঁর ছবি ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ স্টুডেন্ট ফিল্মের পর্যায়ে পড়ে না। লোকেশন যে বিনামূল্যে পাননি তাঁরা, সেও মেনে নিয়েছেন জয়ব্রত। এও কানে আসছে, স্বরূপ নাকি ছবির রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে পিভিআর-আইনক্স-এর ডিস্ট্রিবিউশন ফি সবটাই যে প্রমোদ ফিল্মসের পক্ষ থেকে হয়েছে সেই প্রমাণ দেন। রেজিস্ট্রেশন কলকাতায় না করে মুম্বইতে কেন করলেন জিজ্ঞাসা করায় উত্তর দিতে পারেননি জয়ব্রত। স্বরূপের কোনও কথায় বিরোধিতারই অবকাশ পরিচালক পাননি। সূত্র মারফত আরও জানা যাচ্ছে, স্বরূপ জয়ব্রতকে বলেন যে, এই ছবি সম্বন্ধে কথা বলার অধিকার প্রযোজক হিসেবে একমাত্র প্রমোদ ফিল্মসের প্রতীক চক্রবর্তীর আছে, তাই আলোচনা করতে তাঁকেই আসতে হবে। উপস্থিত অভিনেতা সৌরভ দাসও সহমত পোষণ করেন ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে। এখন ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ ছবির ভবিষ্যৎ প্রমোদ ফিল্মসের হাতে। কী হবে ছবির ভবিষ্যৎ সেটা দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
Advertisement



