টানা চার দিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর সুকুমার সেনগুপ্ত মহাবিদ্যালয়। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী শিউলি সাহা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেই শুক্রবার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেন। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অনুমোদনে আয়োজিত এক জরুরি ফুল গভর্নিং বডির বৈঠকের সিদ্ধান্তেই সংকট মোচনের পথ খুলে যায়।
সমস্ত বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল দীপকবাবু। অভিযোগ, তিনি চার্জ হ্যান্ডওভার না করেই প্রিন্সিপালের ঘর তালাবন্ধ করে চলে যান। সেই ঘরেই আটকে পড়ে ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট, বিভিন্ন সরকারি নথি, প্রশাসনিক ফাইল, অফিসিয়াল স্ট্যাম্প, প্যাড-সহ বহু জরুরি কাগজপত্র। এর ফলে ডিডিও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া আটকে যায় এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বেতনহীন অবস্থায় পড়েন। বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে টানা তিন দিন ধরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছলে বিষয়টি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নজরে আসে।
Advertisement
শুক্রবারের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রী শিউলি সাহা। উপস্থিত ছিলেন টিচার ইনচার্জ ডা বামদেব সেনাপতি, ডা অরুণ কুমার শাসমল, ডা প্রতীম ভট্টাচার্য, ডা অন্বেষা ব্যানার্জি, কাউন্সিল নমিনি ডা সুশান্ত কুমার দোলই, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় নমিনি ডা জয়ন্ত কুণ্ডু, রাজ্য সরকারের নমিনি তপন ভুঁইয়া ও শেখ হাইসেন আলি এবং নন-টিচিং প্রতিনিধি শেখ মোতাহার আলি।
Advertisement
সভায় মন্ত্রী শিউলি সাহা প্রাক্তন প্রিন্সিপালের আচরণের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এভাবে তালাবন্দি করে অচল অবস্থায় ফেলে রাখা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চার্জ না দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে চলে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। শিক্ষক-কর্মচারীরা যাতে বেতন থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।’
মন্ত্রী জানান, ‘যে ঘরে সার্টিফিকেট থেকে সরকারি নথি—সবই আটকে ছিল, সেই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান ছিল অত্যন্ত জরুরি। ডিডিও বদলের আবেদন ডিপিআই দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
তিনি আরও আশ্বাস দেন যে, ভবিষ্যতে এমন বিশৃঙ্খলা আর না ঘটে সে জন্য কলেজ প্রশাসনকে আরও স্বচ্ছ ও শক্তিশালীভাবে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা যেমন মুখ্য, তেমনই জরুরি কলেজের স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষা করা। কোনওভাবেই কলেজকে আর অচল হতে দেব না।’
মন্ত্রী শিউলি সাহার এই দৃঢ় অবস্থান ও আশ্বাসে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। কলেজ সূত্রের বক্তব্য, ডিডিও পরিবর্তন সম্পন্ন হলেই বেতন-সহ সমস্ত প্রশাসনিক কাজ স্বাভাবিক হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের একাডেমিক কার্যকলাপও দ্রুত পূর্ণমাত্রায় চালু হয়ে যাবে।
Advertisement



